পোস্টগুলি

এপ্রিল, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

সাবধান! জুলুম করো না

বাহু কর্তিত এক লোক বাজারে দাঁড়িয়ে বলছিল : ‘যে ব্যক্তি আমার কাহিনি জানবে- সে কারো ওপর জুলুম করবে না।’ কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘ভাই কী তোমার কাহিনি?’ “আমি পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা ছিলাম। একদিন এক মৎস্যশিকারী একটি বড় মাছ নিয়ে যাচ্ছিল। মাছটি আমার খুব পছন্দ হল। ডেকে বললাম : ‘আরে মিয়া! মাছটি আমাকে দিয়ে দাও।’  : ‘জনাব! মাছ দিতে আমার আপত্তি নাই; মূল্য দিতে হবে। বাড়িতে কোন খাবার নেই। ক্ষুধার্ত বাচ্চারা -বাবা খাবার নিয়ে বাড়ি আসবে- অপেক্ষায় আছে। দীর্ঘ সময় ব্যয়ে বহু কষ্টে মাছটা ধরেছি।’  মূল্য দেওয়া তো পরের কথা; বেদম প্রহার শুরু করলাম। হাড়ি থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলাম। মাছ হাতে বাড়ির দিকে যাচ্ছি- হঠাৎ নড়ে ওঠল। ভালোভাবে ধরার চেষ্টা করছি- ইতোমধ্যে আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিল। ব্যথা শুরু হল। বাড়িতে পৌঁছার পর তীব্রতা বাড়তে থাকল। তখন ছিল রাত। সারারাত ছটফট করলাম। চোখের পাতা একত্র করা সম্ভব হল না। খুব ভোরে গিয়ে ডাক্তারকে ক্ষতস্থান দেখালাম। বলল : ‘এ তো মারাত্মক বিষাক্ত ক্ষত। জানে রক্ষা চাইলে এক্ষণ আঙ্গুল কাটতে হবে। কালক্ষেপণে পুরো হাত হারাতে হবে।’ আঙ্গুল হারিয়ে বাড়ি এলাম। তখনো প্রচণ্ড ব্যথা। স...

মারেফাতে এলাহী লাভে শায়খের প্রয়োজনীয়তা

হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর শুরুর দিকের কথা। ইরানের খিরকান অঞ্চলে সময়ের শ্রেষ্ঠ সুফী হিসেবে সমধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব শায়েখ আবুল হাসান খিরকানী রহ. (৩৫২-৪২৫ হি./৯৬৩-১০৩৩ ঈ.)। পথে ডাকাতের প্রকোপ হেতু একদল মুসাফির শায়েখের নিকট দুআর আরজি নিয়ে হাজির। শায়েখ বললেন, পথে আক্রান্ত হলে আমার নাম নিও; ইন শা আল্লাহ বিপদ কেটে যাবে। কাফেলায় দ্বিমত দেখা দিল। তাহলে কি শায়েখের নামের মর্যাদা (!) আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামেরও অধিক? পথে বিপদ যদি এসেই যায়- আমরা ‘আল্লাহর নাম, রাসুলের নাম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি পাঠ করে সাহায্য চাব। অপর অংশ বলল, না; শায়েখ যা বলেছেন আমরা তাই করব। কাফেলা রওনা হল পরদিন সকালে। বিরাট ডাকাত দলের মুখোমুখি! পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো আমল চলল। দ্বিতীয় অংশকে আল্লাহ তা‘আলা দুশমনের দৃষ্টি হতে আড়াল করে দিলেন। অন্যদের হত্যা করে সর্বস্ব লুটে নিল দস্যুরা। বাকিদের যাত্রেচ্ছা ভেস্তে গেল। ফিরে গেল খিরকানে। ঘটনার ইতিবৃত্ত শুনে শায়েখ বললেন, আমি আল্লাহর এক গুনাহগার বান্দা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নগণ্য এক উম্মত। মূল ঘটনা হল- আমি আল্লাহকে চিনেছি। তোমরা সে পরি...

ইবলিসের ইবলিসি

বনি ইসরাঈলে এক আবেদ পাদ্রী ছিল। ইবলিস তাকে প্রতারিত করার ফন্দিতে- ঐ অঞ্চলের এক যুবতীর গলা টিপে ধরল। শয়তানী প্রভাবে মেয়েটি মারাত্মক অসুস্থ হলে বাড়ির লোকজনের মনে ধারণা জন্মিয়ে দিল, পাদ্রীর নিকট রেখে চিকিৎসা করালে সে সুস্থ হবে। পাদ্রী প্রথমে নিজ হেফাজতে রাখতে অস্বীকার করলেও লোকজনের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হল। এবার পাদ্রীর মনে কুমন্ত্রণা দিতে দিতে অপরাধে লিপ্ত করল। এক পর্যায়ে মেয়েটি গর্ভধারণ করলে পাদ্রীর মনে জাগিয়ে দিল- অভিভাবকরা জানতে পারলে তোমাকেই দায়ী করবে এবং তোমার মান-সম্মান সব শেষ হবে। তারচেয়ে তাকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে ফেল। বলবে, রোগের তীব্রতায় সে মারা গেছে। এতে তোমার সব সমস্যা চুকে যাবে। ওদিকে শয়তান তো বসে নেই। অভিভাবকদের মনেও বিভিন্ন আশঙ্কার জন্ম দিয়ে মেয়ের খোঁজে পাঠাল। পরিশেষে সকলে মিলে দোষী সাব্যস্ত করে পাদ্রীকে শূলে চড়ানোর প্রক্কালে শয়তান হাজির হয়ে নিজ পরিচয় দিয়ে আবেদকে বলল, “সব আমিই করিয়েছি। এখন যদি একটি কাজ কর- তোমার মুক্তির উপায় বের করে দিতে পারি।” নিরুপায় আবেদ পাদ্রী জানতে চাইল “কী কাজ”? বলল, “খুব সহজ। আমাকে মাত্র দুটি সেজদা করলেই হল।” উপায়ন্তর না দেখে পাদ্রী ভাবল, এখন জীবন ...

খোদাপ্রেম ও খোদাভীতি

হজরত ওমর ফারুক রাদি.-এর খেলাফত কাল। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি.-এর বিধবা স্ত্রীর নিকট বিবাহের পয়গাম পাঠালেন খলিফাতুল মুসলিমিন। অসম্মতি প্রকাশ করলেন। খলিফা শপথ বাক্যে বললেন, কোন প্রকার জৈবিক তাড়নায় নয়; আবু বকরের পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে জানতে উদগ্রীব। সম্মতি পাওয়া গেল।  -- “হজরত আবু বকর রাদি.-এর ঘরে আপনার রাত কেমন কাটত? -- “রাতের প্রথম প্রহর তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতেই উপস্থিত থাকতেন। ঘরে এসে আমাদেরকে কিছু সময় দিতেন। মধ্য রাতে অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। তখন সারা ঘরে এমন এক অপার্থিব সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ত; মেশক-গোলাব-কর্পুর কোনটার সাথেই যার তুলনা চলে না। সবই তুচ্ছ। সুবহে সাদিক হয়ে এলে এমন এক কলিজাফাটা চিৎকার দিতেন কাবাবের পোড়া গোশতের ন্যায় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত।” হজরত ওমর ফারুক রাদি. ঝরঝর কাঁদতে লাগলেন:- “সিদ্দিকে আকবার সারা রাত মাহবুবে হাকিকি-প্রকৃত প্রেমাষ্পদের সান্নিধ্যে থাকতেন। যেহেতু সকালে জাগতিক কাজকর্মে ব্যস্ত হতে হত; প্রেমাষ্পদের বিরহ ছিল সহ্যের অতীত, তাই বুকফাটা আর্তনাদে কলজেপোড়া গন্ধ বেরিয়ে আসত।” মসজিদুল হারাম। নিশি রাত। খাজা হাসান বসরী রহ. জিকির...