মারেফাতে এলাহী লাভে শায়খের প্রয়োজনীয়তা

হিজরি পঞ্চম শতাব্দীর শুরুর দিকের কথা। ইরানের খিরকান অঞ্চলে সময়ের শ্রেষ্ঠ সুফী হিসেবে সমধিক পরিচিত ব্যক্তিত্ব শায়েখ আবুল হাসান খিরকানী রহ. (৩৫২-৪২৫ হি./৯৬৩-১০৩৩ ঈ.)। পথে ডাকাতের প্রকোপ হেতু একদল মুসাফির শায়েখের নিকট দুআর আরজি নিয়ে হাজির। শায়েখ বললেন, পথে আক্রান্ত হলে আমার নাম নিও; ইন শা আল্লাহ বিপদ কেটে যাবে। কাফেলায় দ্বিমত দেখা দিল। তাহলে কি শায়েখের নামের মর্যাদা (!) আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামেরও অধিক? পথে বিপদ যদি এসেই যায়- আমরা ‘আল্লাহর নাম, রাসুলের নাম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি পাঠ করে সাহায্য চাব। অপর অংশ বলল, না; শায়েখ যা বলেছেন আমরা তাই করব।
কাফেলা রওনা হল পরদিন সকালে। বিরাট ডাকাত দলের মুখোমুখি! পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো আমল চলল। দ্বিতীয় অংশকে আল্লাহ তা‘আলা দুশমনের দৃষ্টি হতে আড়াল করে দিলেন। অন্যদের হত্যা করে সর্বস্ব লুটে নিল দস্যুরা। বাকিদের যাত্রেচ্ছা ভেস্তে গেল। ফিরে গেল খিরকানে। ঘটনার ইতিবৃত্ত শুনে শায়েখ বললেন, আমি আল্লাহর এক গুনাহগার বান্দা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নগণ্য এক উম্মত। মূল ঘটনা হল- আমি আল্লাহকে চিনেছি। তোমরা সে পরিচয় গড়ে তোলনি। জান তো, ‘অচেনা ব্যক্তির আশ্রয় প্রার্থনা ফলপ্রসূ হয় না’। নিরাপত্তার দু‘আ চাইলে আল্লাহ ও রাসুলের সাথে আমার পরিচয়-মা‘রেফাতের সূত্রে তোমাদের আল্লাহর হেফাজতে সপেছি। তোমাদের বেঁচে যাওয়ার রহস্য এটাই।
সম্মানিত পাঠক! সুলুক ও তরিকতের পথ অত্যন্ত দুর্গম, কণ্টকাকীর্ণ, মারাত্মক বিপদসঙ্কুল। এপথে একাকী চলা মারাত্মক দুরূহ ব্যাপার। শায়খে কামেল এ পথের চড়াই-উৎরাই সম্পর্কে জ্ঞাত। শায়খের নির্দেশনা-তাওয়াজ্জুহ ব্যতীত পথ অতিক্রম করা অসম্ভবপ্রায় দুষ্কর। বাইয়াতের মাধ্যমে পূর্ববর্তী বুজুর্গদের সিলসিলায় যুক্ত হয়ে ফয়েজ লাভ না করে; একাকী নিজস্ব রিয়াজাত-মুজাহাদার মাধ্যমে মনজিলে মাকসাদ-অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছা অলীক কল্পনার মতোই।
গুনাহগার লেখক একজন সালেককে জানে। ২০১২ সালে শায়খের নিকট বাইয়াত হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ ও মা‘মুলাত আদায় করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মা‘মুলাতের ধাপও এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৪/৫ মাস পূর্বে স্বপ্নে চারটি আমলের নির্দেশপ্রাপ্ত হলেন। সাথে তার কিছু দুনিয়াবী সমস্যার কথাও উল্লেখ করা হল- যা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তব। সালেক মনে মনে ভাবতে লাগলেন, আল্লাহ রব্বুল আলামিন হয়ত...। কিন্তু মনে অজানা অস্থিরতা। শায়েখকে জানালে বললেন, সাবধান! স্বপ্নের কারণে কোন মা‘মুল শুরু করা যাবে না। এবার তো সহিহ সহিহ আমল এসেছে। মানতে থাকলে ধীরে ধীরে কখন যে বিদ‘আতের দিকে নিয়ে যাবে টেরও পাবেন না।
মা‘রেফাতে এলাহীর আকাক্সক্ষী হে মুহতারাম! নিজ ইলম ও আমলের ওপর মনোতুষ্টি নিয়ে বসে থাকবেন না। পুরানা কোন পথিকের নির্দেশনা গ্রহণ করাই শ্রেয়।  নিজের পীর ও মুরশিদ নির্বাচন-সহজতার জন্য হাকিমুল উম্মাত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হজরত থানবী রহ. বর্ণিত হক্কানী পীরের দশটি পরিচয় ‘কছদুস সাবিল’ থেকে উদ্ধার করছি। ১. প্রয়োজন পরিমাণ দীনী ইলম থাকবে। ২. আকিদা, আমল ও আখলাকের ক্ষেত্রে শরীয়তের পূর্ণ পাবন্দি করবেন। ৩. দুনিয়ার ব্যাপারে নির্লোভ নির্মোহ হবেন, নিজের যোগ্যতা-কামেল হওয়ার দাবি করবেন না। ৪. কোন শায়খে কামেলের সোহবতে থেকে ইজাজত লাভ করেছেন। ৫. সমকালীন ওলামা মাশায়েখগণ তাকে ভালো জানবেন। ৬. সাধারণ পাবলিকের তুলনায় দীনদার ব্যক্তিবর্গ বেশি ঝুঁকবে। ৭. মুরিদদের অধিকাংশ ধীরে ধীরে আমলের ওপর ওঠবে এবং দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ কমতে থাকবে। ৮. তা‘লিম ও তালকিন-আমল শিখানো ও উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রে মুরিদদের প্রতি ¯েœহশীল হবেন। তাদের কোন দোষ দেখলে বা জানলে মৃদু শাসনও করবেন। ৯. যারা মজলিসে নিয়মিত যাতায়াত করবে তাদের অন্তর থেকে দুনিয়ার মুহাব্বত হ্রাস পাবে এবং আল্লাহর মুহাব্বতে বৃদ্ধি অনুভব করবে। ১০. তিনি নিজেও মা‘মুলাত আদায়-জিকির শোগলের পাবন্দি করবেন।
গুণদশটি বর্তমান থাকলে- কোন কারামত প্রকাশ পায় কি-না, যে দু‘আ করে তাই সাথে সাথে ঘটে কি-না, দুনিয়াবী কার্যাবলিতে তার ইশারায় কোন পরিবর্তন সাধিত হয় কি-না এসব যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। কেননা শায়খে কামেল হওয়ার জন্য এসব আবশ্যক নয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন