খোদাপ্রেম ও খোদাভীতি

হজরত ওমর ফারুক রাদি.-এর খেলাফত কাল। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদি.-এর বিধবা স্ত্রীর নিকট বিবাহের পয়গাম পাঠালেন খলিফাতুল মুসলিমিন। অসম্মতি প্রকাশ করলেন। খলিফা শপথ বাক্যে বললেন, কোন প্রকার জৈবিক তাড়নায় নয়; আবু বকরের পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে জানতে উদগ্রীব। সম্মতি পাওয়া গেল। 
-- “হজরত আবু বকর রাদি.-এর ঘরে আপনার রাত কেমন কাটত?
-- “রাতের প্রথম প্রহর তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতেই উপস্থিত থাকতেন। ঘরে এসে আমাদেরকে কিছু সময় দিতেন। মধ্য রাতে অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। তখন সারা ঘরে এমন এক অপার্থিব সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ত; মেশক-গোলাব-কর্পুর কোনটার সাথেই যার তুলনা চলে না। সবই তুচ্ছ। সুবহে সাদিক হয়ে এলে এমন এক কলিজাফাটা চিৎকার দিতেন কাবাবের পোড়া গোশতের ন্যায় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত।”
হজরত ওমর ফারুক রাদি. ঝরঝর কাঁদতে লাগলেন:- “সিদ্দিকে আকবার সারা রাত মাহবুবে হাকিকি-প্রকৃত প্রেমাষ্পদের সান্নিধ্যে থাকতেন। যেহেতু সকালে জাগতিক কাজকর্মে ব্যস্ত হতে হত; প্রেমাষ্পদের বিরহ ছিল সহ্যের অতীত, তাই বুকফাটা আর্তনাদে কলজেপোড়া গন্ধ বেরিয়ে আসত।”



মসজিদুল হারাম। নিশি রাত। খাজা হাসান বসরী রহ. জিকিরে মশগুল। কা‘বার ছাদ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। ভাবলেন- এত রাতে তো কেউ বাইতুল্লাহর ছাদে যাওয়ার কথা নয়! আচ্ছা দেখে আসি- কে? কেনই বা কাঁদছে? এক ব্যক্তি গলাকাটা মোরগের ন্যায় তড়পাচ্ছে। কেঁদে কেঁদে বলছে- “আয় আল্লাহ! আপনিই জানেন, আমার পেটে জাহান্নামের অগ্নি প্রবেশ করবে; না করবে না! আমার শরীর আগুনে জ্বলবে; না জ্বলবে না! আমার চোখ দোযখ দেখবে; না দেখবে না! আমার জিহ্বা ও তালুকে ‘জাক্কুম’ খেতে হবে; না হবে না!”
হজরত হাসান  বসরী রহ. মনে মনে বললেন- কোন গুনাহগার বান্দা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছে- এমতাবস্থায় নিকটে যাওয়া ঠিক হবে না। নেমে আসলেই দেখা যাবে। দীর্ঘ সময় পর লোকটি নামল। হাসান বসরী রহ. অপেক্ষায়ই ছিলেন। এগিয়ে গেলেন। নেমে আসা যুবককে দেখামাত্র বিহ্বল-হতভম্ব-কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হজরত ইমাম হোসাইন রাদি.। মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে পায়ে লুটিয়ে পড়লেন।
-- “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতী হে! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে পরিমাণ ইলম ও বুজুর্গী দান করেছেন; বর্ণনা করে সাধ্য কার? সে কথা না হয় নাই বা বললাম, আপনার জন্য হজরত ফাতিমা রাদি. কি যথেষ্ট নন? হজরত আলী রাদি. কি যথেষ্ট নন? স্বয়ং আপনার নানাজান রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যথেষ্ট নন?”
হজরত হোসাইন রাদি.-এর চোখে পুনরায় অশ্রুর বান ডাকল।
-- হে হাসান! শোন, যে দিন এ আয়াত  “আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন{২৬:২১৪}” অবতীর্ণ হয়েছিল, নানাজান আম্মাজানকে ডেকে বলেছিলেন- “হে রসুল কন্যা ফাতিমা! তুমি তোমাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে রক্ষা কর; কেননা আল্লাহর নিকট আমি তোমার কোন কাজে আসব না {মুসলিম শরিফ/আবু হোরাইরা রাদি.}”। নানাজানের এ ইরশাদ সতর্কতাসরূপ। কেউ যেন ‘বাবা নেককার’ এ ধোঁকায় পড়ে না যায়। বলে চললেন, যদি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাবা হওয়া আম্মাজানের জন্য যথেষ্ট না হয়; আমার জন্য আলী ও ফাতিমা বাবা-মা হওয়া কী কাজে আসবে? মিয়া হাসান! তুমি আছ কোথায়? কোন ভাবনায় বিভোর হয়ে আছ?”
সম্মানিত পাঠক! দু’ দিনের এ দুনিয়ার সব ধোঁকা থেকে মুক্ত হয়ে কিছুক্ষণ ভাবুন- “প্রকৃত প্রেমাষ্পদ মাওলার সাথে কতটুকু সম্পর্ক তৈরি করেছি? আমি কী নিয়ে যাব? আমার কী হবে?”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন