নববী জবানে দুরুদের ফাজায়েল ০৬

নববী জবানে দুরুদের ফাজায়েল ০৬

মসজিদে প্রবেশের সময় সালাম

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে সে যেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাম পাঠ করে এবং তারপর বলে :- আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রহমাতিক। [আয় আল্লাহ! আমার জন্যে আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিল।] আর যখন বাইরে বের হবে সে যেন বলে:- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক। [আয় আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।]

[হজরত আবু হুমাইদ রাদি. অথবা হজরত আবু উসাইদ আনসারী রাদি./সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ৪৬৫/দারুল কুতুব আলইলমিয়্যাহ, বৈরুত।]

সত্তর রহমত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিবলেন, যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করে; আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাগণ তার ওপর সত্তর বার রহমত পাঠান। সুতরাং এখন বান্দার ইচ্ছা; সে অধিক উপার্জন করুক বা অল্প উপার্জন করুক।

[মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ৬৬০৫/ দারুল হাদিস, কায়রো।]

তোমাকে কি একটি উপহার দিব?

হজরত ইবনে আবি লায়লা রহ. বলেন, একবার হজরত কা‘ব ইবনে উজরা রাদি.-এর সাক্ষাত লাভ হলে তিনি আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে একটি উপহার দিব? অতঃপর বললেন, একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট তাশরিফ আনলে আমরা নিবেদন করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম- এটা তো আমরা জেনেছি যে, আপনার প্রতি সালাম কীভাবে পাঠাতে হয়। এখন আমরা জানতে চাই আপনার প্রতি সালাত কীভাবে পাঠাতে হয়? (অর্থাৎ সালাতের পদ্ধতি আমাদের শিখিয়ে দিন।) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন:-

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। কামা সাল্লাইতা আলা আলি ইবরহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। কামা বারকতা আলা আলি ইবরহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।

[সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৪০৬/দারুল কুতুব আলইলমিয়্যাহ বৈরুত।]

ফায়েদা: অধিকাংশ রেওয়ায়েতেআলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম থাকলেও যেখানে সরাসরি "আলা আলি ইবরাহিমথাকবে সেখানে অর্থের মধ্যে কোন পার্থক্য তৈরি হয় না। কারণ "আলি ইবরাহিম” তথা ইবরাহিমের পরিবারের সর্ব প্রধান সর্বপ্রথম ব্যক্তি ইবরাহিম . নিজেই।

সাদা ডায়েরি

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সকল স্থান থেকে তোমাদের মধ্য হতে ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটে হবে যে দুনিয়াতে তোমাদের মধ্য হতে সবচেয়ে বেশি সালাত পাঠকারী হবে।

যে ব্যক্তি জুমার দিন জুমার রাতে আমার প্রতি সালাত প্রেরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার একশত প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। এরমধ্যে সত্তরটি আখেরাতের প্রয়োজনসমূহের মধ্য থেকে হবে। আর ত্রিশটি দুনিয়াবী প্রয়োজনসমূহের মধ্য হতে। আল্লাহ তায়ালা দুরুদের জন্য একজন ফেরেশতাকে নিযুক্ত করবেন। ফেরেশতা পঠিত দুরুদ শরীফকে আমার কবরে এমনভাবে উপস্থিত করবে যেমন তোমাদের জন্য উপঢৌকন উপস্থিত করা হয়। যে আমার ওপর দুরুদ পাঠ করেছে ঐ ফেরেশতা তার নাম বংশ পরিচয় সমেত আমাকে জানাবে। তখন আমি তার নাম-পরিচয় আমার নিকট সাদা ডায়েরিতে সংরক্ষণ করে রাখবো।

[নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের খাদেম আনাস বিন মালিক রাদি./শুআবুল ঈমান-হাদিস নং ২৭৭৩/মাকতাবাতুর রশিদ, রিয়াদ।]

আফসোসের মজলিস

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,  যে লোকেরা কোনো বৈঠকে বসল অথচ ঐ বৈঠকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরুদ পাঠ করল না;   বৈঠক তাদের জন্য আফসোসের কারণ হবে। এমনকি যদিও তারা (অন্যসব আমলের উসিলায়) জান্নাতে প্রবেশ করে। অন্য যারা বৈঠকে দুরুদ পাঠ করেছিল তাদের সাওয়াব দেখে তাদের এই আফসোস হতে থাকবে।

[ আবু সাঈদ খুদরী রাদি./শুআবুল ঈমান হাদিস নং-১৪৭০/মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ।]

ফায়েদা:- "আলকওলুল বাদী" নামক কিতাবে উল্লেখ আছে উল্লিখিত আফসোস কেয়ামতের দিন হবে। জান্নাতে কোনো আফসোস থাকবে না।

এটি বঞ্চনা

হুজুর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের মূল্যবান ইরশাদ- এটি চরম বঞ্চনার কারণ যে, কোনো ব্যক্তির সামনে আমার আলোচনা হল; অথচ সে আমার প্রতি সালাত প্রেরণ করল না।

[মুহাম্মাদ বিন আলী রাদি./ মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক হাদিস নং-৩১২১/ আলমজলিসুল ইলমী, আলহিন্দ।]

ফায়েদা :- হাদিসে বর্ণিতজাফা" শব্দের অর্থ করা হয়েছে চরম বঞ্চনা আরবি ভাষার ব্যবহার হিসেবে শব্দটির অন্যান্য অর্থ হল, নেক কাজের তাওফিক থেকে বঞ্চিত থাকা, কল্যাণ প্রাপ্ত না হওয়া, সম্পর্ক তৈরি না হওয়া। শেষোক্ত অর্থটি গ্রহণ করলে হাদিসের মর্ম হবে যে ব্যক্তি হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনেও দুরুদ শরীফ পড়া থেকে বিরত থাকল সে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পর্ক তৈরি হওয়া থেকে বঞ্চিত থাকল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মস্ত চিঠির ক্ষুদ্র পত্র

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

নববী জবানে দুরুদের ফাজায়েল ০১