খোদা তোমায় ডাকতে জানি না
ইমাম হাসান বিন সুফিয়ান নাসাবী (জন্ম: ৮২৮ মৃত্যু: ৯১৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিজ যুগে খোরাসানের বড় আলেম ও মুহাদ্দিস। দুনিয়াবিমুখতায় সমুজ্জ্বল। ইবাদতে মগ্ন এক সাধক।
ছাত্র জীবন। ইলমে হাদিস অন্বেষণে মিশরে আছেন। নয় বন্ধু স্থানীয় এক শাইখুল হাদিসের নিকট হাদিস পড়ছেন। অবস্থান একটি মসজিদে। সাথে আনা টাকাকড়ি ফুরিয়ে গেল।বিক্রি করার মতো কোন বস্তুও কারো নিকট নেই। অনাহারে কেটে গেল তিনদিন। সিদ্ধান্ত হল, বাইরে যেয়ে সাহায্য চাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু কে যাবে? আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়া কাজটি করতে কেউ রাজি নন। লটারি হল। নাম উঠল হাসান বিন সুফিয়ানের।
বান্দার দরবারের পরিবর্তে মাওলার দরবারকেই পছন্দ করলেন। মসজিদের এক কোণে নামাজ, দীর্ঘ দু~আ-মুনাজাত চলছে। নিজের দীনতা, দুর্বলতা প্রকাশে সেজদাবস্থায় চলছিল কান্নাকাটি।দামি পোশাকে সুদর্শন এক যুবক মসজিদে প্রবেশ করল। : "হাসান বিন সুফিয়ান কে?" অন্যরা দেখিয়ে দিলেন। : "শায়েখ! মিসরের শাসক আমির আহমাদ বিন তুলুন আবুল আব্বাস তুর্কী [জন্ম: ৮৩৫ মৃত্যু: ৮৮৪, শাসনকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ৮৬৮ থেকে ১০ মে ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ] আমাকে পাঠিয়েছেন। সালাম জানিয়েছেন। আপনাদের প্রয়োজন পূরণের আবশ্যক দায়িত্ব সম্পর্কে বেখবর থাকায় ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। কর্তব্যে অবহেলার দোষ স্বীকার করেছেন। আগামীকাল সশরীরে খেদমতে উপস্থিত হবেন। আজ সামান্য হাদিয়া পাঠিয়েছেন; যা আপনাদের গ্রহণ করতেই হবে।" নয়জনের সামনে নয়টি থলি রেখে যুবক বিদায় নিল। প্রতিটি থলিতে ছিল একশত দিনার। ইলমে হাদিসের তালিবুল ইলমগণ বাদশাহর অবহিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যুবক বলল, "দ্বিপ্রহরে বিশ্রাম করছিলেন। শূন্যে বিচরণকারী এক অশ্বারোহী বর্ষা হাতে এগিয়ে এল। পার্শ্বদেশে মৃদু খোঁচা দিয়ে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে আওয়াজ দিল : উঠ। হাসান বিন সুফিয়ান ও তার সাথীদের সাহায্য কর। তারা অমুক মসজিদে আজ তিনদিন যাবৎ অনাহারে।"
পরদিন বাদশাহ হাজির হন। মসজিদের আশাপাশের ভ‚মি ক্রয় করে তালিবুল ইলমদের ব্যয়নির্বাহের জন্য ওয়াকফ করে দেন। [আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, সিয়ারু আলামিন নুবালা]
বলা হয়, বাদশাহর ক্রয়কৃত এ জায়গার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে ৯৭০/৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জামিআ আলআজহার প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুরায়ে বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ ফরমান : "আমার বান্দাগণ যখন আপনার নিকট আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার নিকট দুআ করে, তখন আমি তার দুআ কবুল করি। কাজেই, তারা যেন আমার আদেশ মানে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, যাতে তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়।"
হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদি. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইরশাদ নকল করেন : "কোন মুসলমান গুনাহ/আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ ব্যতীত যে কোন দুআ করে তা অবশ্যই কবুল হয়। সে তিনটি বিষয়ের কোন একটি প্রাপ্ত হয়। ক. যা কামনা করেছে তা লাভ করে, খ. আখেরাতের প্রতিদান হিসেবে দুআটি জমা রাখা হয়, গ. তার কোন বিপদ দূর করে দেওয়া হয়।" [মুুসনাদে আহমাদ : ১৭/২১৩]
বাংলার গায়ক গেয়েছেন : "খোদা তোমায় ডাকতে জানি না/ ডাকার মতো ডাকলে খোদায় কেমনে শোনে না।" অন্য কবি তার কবিতায় বলেন : "আল্লাহ তোমায় ডাকার মতো/ ডাকতে জানি না,/ তাই কি তুমি দাও না সাড়া/ বুঝতে পারি না।"
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, "বান্দা আমার ওপর যেরূপ ধারণা করে আমি তার জন্যে সেরূপ ফয়সালা করি।" [মুত্তাফাকুন আলাইহি] আজ আমাদের বিশ্বাস অতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমাদের চারপাশে বিদ্যমান এ বস্তুজগতের প্রকৃত কোন শক্তিই যে নেইÑ কথাটা আমরা মুখে বললেও স্বভাবগতভাবে অন্তরে বিশ্বাস করি অন্য রকম। যদিও ঐ কথাটা মুখে যেমন বলি না, কেউ বললে মেনেও নেই না; এমনকি বিশ্বাসও করি না। আসুন, অতি একান্তে নীরবে চিন্তা করি : "আল্লাহ রব্বুল আলামিন সমগ্র জগৎ পরিচালনা করছেন, কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া আর তাঁর হুকুম ছাড়া একটি শুকনো পাতাও ঝরে না। মুখে মুখে বলা একথাটা আমার অন্তরে কতুটুকু ক্রিয়াশীল এবং সে অনুযায়ী আমার জীবন পরিচালিত হচ্ছে না-কি বাহ্যিক বস্তুসমূহকে ক্রিয়াশীল মনে করে এগুলোর পেছনে জীবনটা নিঃশেষ করছি?"
ছাত্র জীবন। ইলমে হাদিস অন্বেষণে মিশরে আছেন। নয় বন্ধু স্থানীয় এক শাইখুল হাদিসের নিকট হাদিস পড়ছেন। অবস্থান একটি মসজিদে। সাথে আনা টাকাকড়ি ফুরিয়ে গেল।বিক্রি করার মতো কোন বস্তুও কারো নিকট নেই। অনাহারে কেটে গেল তিনদিন। সিদ্ধান্ত হল, বাইরে যেয়ে সাহায্য চাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু কে যাবে? আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়া কাজটি করতে কেউ রাজি নন। লটারি হল। নাম উঠল হাসান বিন সুফিয়ানের।
বান্দার দরবারের পরিবর্তে মাওলার দরবারকেই পছন্দ করলেন। মসজিদের এক কোণে নামাজ, দীর্ঘ দু~আ-মুনাজাত চলছে। নিজের দীনতা, দুর্বলতা প্রকাশে সেজদাবস্থায় চলছিল কান্নাকাটি।দামি পোশাকে সুদর্শন এক যুবক মসজিদে প্রবেশ করল। : "হাসান বিন সুফিয়ান কে?" অন্যরা দেখিয়ে দিলেন। : "শায়েখ! মিসরের শাসক আমির আহমাদ বিন তুলুন আবুল আব্বাস তুর্কী [জন্ম: ৮৩৫ মৃত্যু: ৮৮৪, শাসনকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ৮৬৮ থেকে ১০ মে ৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ] আমাকে পাঠিয়েছেন। সালাম জানিয়েছেন। আপনাদের প্রয়োজন পূরণের আবশ্যক দায়িত্ব সম্পর্কে বেখবর থাকায় ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। কর্তব্যে অবহেলার দোষ স্বীকার করেছেন। আগামীকাল সশরীরে খেদমতে উপস্থিত হবেন। আজ সামান্য হাদিয়া পাঠিয়েছেন; যা আপনাদের গ্রহণ করতেই হবে।" নয়জনের সামনে নয়টি থলি রেখে যুবক বিদায় নিল। প্রতিটি থলিতে ছিল একশত দিনার। ইলমে হাদিসের তালিবুল ইলমগণ বাদশাহর অবহিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যুবক বলল, "দ্বিপ্রহরে বিশ্রাম করছিলেন। শূন্যে বিচরণকারী এক অশ্বারোহী বর্ষা হাতে এগিয়ে এল। পার্শ্বদেশে মৃদু খোঁচা দিয়ে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে আওয়াজ দিল : উঠ। হাসান বিন সুফিয়ান ও তার সাথীদের সাহায্য কর। তারা অমুক মসজিদে আজ তিনদিন যাবৎ অনাহারে।"
পরদিন বাদশাহ হাজির হন। মসজিদের আশাপাশের ভ‚মি ক্রয় করে তালিবুল ইলমদের ব্যয়নির্বাহের জন্য ওয়াকফ করে দেন। [আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, সিয়ারু আলামিন নুবালা]
বলা হয়, বাদশাহর ক্রয়কৃত এ জায়গার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে ৯৭০/৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জামিআ আলআজহার প্রতিষ্ঠিত হয়।
সুরায়ে বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ ফরমান : "আমার বান্দাগণ যখন আপনার নিকট আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমার নিকট দুআ করে, তখন আমি তার দুআ কবুল করি। কাজেই, তারা যেন আমার আদেশ মানে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, যাতে তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়।"
হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদি. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইরশাদ নকল করেন : "কোন মুসলমান গুনাহ/আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকরণ ব্যতীত যে কোন দুআ করে তা অবশ্যই কবুল হয়। সে তিনটি বিষয়ের কোন একটি প্রাপ্ত হয়। ক. যা কামনা করেছে তা লাভ করে, খ. আখেরাতের প্রতিদান হিসেবে দুআটি জমা রাখা হয়, গ. তার কোন বিপদ দূর করে দেওয়া হয়।" [মুুসনাদে আহমাদ : ১৭/২১৩]
বাংলার গায়ক গেয়েছেন : "খোদা তোমায় ডাকতে জানি না/ ডাকার মতো ডাকলে খোদায় কেমনে শোনে না।" অন্য কবি তার কবিতায় বলেন : "আল্লাহ তোমায় ডাকার মতো/ ডাকতে জানি না,/ তাই কি তুমি দাও না সাড়া/ বুঝতে পারি না।"
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, "বান্দা আমার ওপর যেরূপ ধারণা করে আমি তার জন্যে সেরূপ ফয়সালা করি।" [মুত্তাফাকুন আলাইহি] আজ আমাদের বিশ্বাস অতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমাদের চারপাশে বিদ্যমান এ বস্তুজগতের প্রকৃত কোন শক্তিই যে নেইÑ কথাটা আমরা মুখে বললেও স্বভাবগতভাবে অন্তরে বিশ্বাস করি অন্য রকম। যদিও ঐ কথাটা মুখে যেমন বলি না, কেউ বললে মেনেও নেই না; এমনকি বিশ্বাসও করি না। আসুন, অতি একান্তে নীরবে চিন্তা করি : "আল্লাহ রব্বুল আলামিন সমগ্র জগৎ পরিচালনা করছেন, কোন কিছুর সাহায্য ছাড়া আর তাঁর হুকুম ছাড়া একটি শুকনো পাতাও ঝরে না। মুখে মুখে বলা একথাটা আমার অন্তরে কতুটুকু ক্রিয়াশীল এবং সে অনুযায়ী আমার জীবন পরিচালিত হচ্ছে না-কি বাহ্যিক বস্তুসমূহকে ক্রিয়াশীল মনে করে এগুলোর পেছনে জীবনটা নিঃশেষ করছি?"
আল্লাহুম্মা অফ্যিকনা
উত্তরমুছুন