“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদি. বর্ণনা করেন, একদা আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলাম। হজরত ইমাম হুসাইন রাদি. (ছোট বয়সে) রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিঠের উপর বসা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দড়ি মুখে নিয়ে রেখেছেন। যার অপর প্রান্ত হুসাইন রাদি.-এর হাতে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটুর উপর ভর করে (ঘোড়ার ন্যায়) হাঁটছেন। দৃশ্য দেখে আমি বললাম, ‘ওহে আবু আব্দুল্লাহ! (হুসাইন রাদি. উদ্দেশ্য) তোমার উটটি কতইনা উত্তম উট।’ শুনে রসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এই আরোহীও কতইনা উত্তম আরোহী।’
একদা হজরত হুসাইন রাদি.-এর দরবারে একজন সাহায্যপ্রার্থী আসল।
: ‘হে রসুল দৌহিত্র! আমি গরিব মানুষ। পরিবারে সদস্যও বেশি। রাতের খাবার দান করবেন- এমন আশায় আপনার দরবারে এসেছি।’
: ‘কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। আমার খাবার আসছে।’ অল্পক্ষণ পর, আমিরে মুআবিয়া রাদি.-এর [সাহাবিয়ে রসুল ও কাতেবে ওহী হজরত আবু আবদুর রহমান মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান। হিজরতের ১৫ বৎসর পূর্বে (৬০৮ ঈ.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। হস্তলিপি ও গণিত শাস্ত্রে পাণ্ডিত্ব অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। সিডন, ইরাক, লেবানন (আংশিক) ও বৈরুত বিজয়ে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। হজরত ওমর রাদি.-এর খেলাফতকালে জর্ডানের গভর্নর নিযুক্ত হন। অব্যবহিত পরে দামেশকও তাঁর দায়িত্বে আসে। হজরত উসমান রাদি. শামের অন্তর্ভুক্ত সকল অঞ্চলের দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করেন। হজরত উসমান রাদি.-এর শাহাদাতের পর হজরত আলী রাদি. খলিফা হলে আগে উসমান হত্যার বিচার; না আগে পুরো মুসলিম জাহানে চলমান বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ- এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে (হজরত আলী ও হজরত মুআবিয়া রাদি.) ইজতেহাদী দ্বিমত প্রকাশ পায়। হজরত আলী রাদি.-এর পর পঞ্চম খলিফা হন হজরত হাসান বিন আলী রাদি.। তাঁর পর ৪১ হিজরিতে ষষ্ঠ খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন হজরত মুআবিয়া রাদি.। তিনি ইসলামী খিলাফতের রাজধানী কুফা থেকে দামেশকে স্থানান্তর করেন। দীর্ঘ ১৯ বছরের খেলাফতকালে তাঁর হাতেই উমাইয়া খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭৮ বছর বয়সে ৬০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।] পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি এসে ১ হাজার দিনারের পাঁচটি থলে (মোট ৫,০০০ দিনার) হুসাইন রাদি.-এর সামনে রেখে বলতে লাগল, ‘মুআবিয়া রাদি. ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন, আপাতত এখান থেকে খরচ করুন। পরে আবার পাঠাবেন।’ হুসাইন রাদি. বললেন, ‘এগুলো ঐ ব্যক্তিকে দিয়ে দাও।’ নিজে তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘ক্ষমা করবেন। এই সামান্য মুদ্রার জন্য আপনাকে অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। যদি জানতাম, এত সামান্য মুদ্রা আসছে- আপনাকে অপেক্ষার কষ্ট দিতাম না। আমরা তো বিপদকেই বরণ করে নিয়েছি। দুনিয়ার আরামকে বিদায় জানিয়েছি। অন্যের প্রয়োজনকে নিজেদের প্রয়োজনের চেয়ে অগ্রাধিকার দেওয়াই আমাদের কাজ।’
শিক্ষা : ছোটদের আদর করতে নিজেও ছোট সাজতে হয়। ব্যক্তিত্ব এ ক্ষেত্রে বাধা নয়; উদারতা, মহত্ত্ব, মহানুভবতা, অকৃত্রিম স্নেহের প্রকাশ।
এক ব্যক্তি রাতের খাবার প্রার্থনা করায় ৫ হাজার দিনার দান করার পরও তার নিকট ক্ষমা চাওয়ার মতো উদারতা আহলে বাইতের জন্যই বুঝি সম্ভব! কিন্তু প্রার্থনাকারীকে ধমক দেওয়া, বিরক্ত হওয়া ইত্যাদি আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালা (সে ভিক্ষুক আমি দাতা) ভুলে যাওয়া নয় কি? ‘এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে/ এই তো নদীর খেলা/ সকাল বেলার ধনীরে তুই/ ফকির সন্ধ্যা বেলা।’
সাহাবায়ে কেরাম আনহুমের ঘটনাগুলো আমাদের জীবনে রোলমডেল ৷
উত্তরমুছুনমাশাআল্লাহ
উত্তরমুছুন