দুর্বল অক্ষম বান্দার সম্পৃক্তি

 দুর্বল অক্ষম বান্দার সম্পৃক্তি

অনুবাদ : আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাগণ রহমত পাঠায় রসুলের ওপর হে ঈমানদারগণ! রহমত পাঠাও তাঁর ওপর এবং সালাম পাঠাও সালাম বলে [সুরা আহযাব : ৫৬ কৃত হজরত শায়খুল হিন্দ রহ.]

তাফসির :সালাত আলান্ নবীদ্বারা উদ্দেশ্য হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা, সম্মান প্রদর্শন, অনুগ্রহ, সহানুভূতি ইত্যাদি হল কর্তার সম্বন্ধহীন সাধারণ অর্থ অতঃপর যে কর্তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত হবে কর্তার মর্যাদা স্তর হিসেবে প্রশংসা, সম্মান, অনুগ্রহ, সহানুভূতি ইত্যাদির উপযুক্ত মর্ম গ্রহণ করতে হবে উদাহরণস্বরূপ আমরা নিজেদের কথাবার্তায় বলে থাকি পিতা সন্তানের ওপর, সন্তান পিতার ওপর, ভাই ভাইয়ের ওপর মেহেরবান অথবা একে অপরকে মুহাব্বত করে একথা সকলেই বোঝেন সন্তানের ওপর পিতার মেহেরবানি মুহাব্বত যেরূপ; পিতার ওপর সন্তানের মেহেরবানি মুহাব্বত সেরূপ নয়; বরং সম্পূর্ণ আলাদা আবার ভাই ভাইয়ের ওপর যে মেহেরবানি মুহাব্বত তাও দুয়ের চেয়ে আলাদা তৃতীয় রকম হয়ে থাকে। অথচ পিতা, সন্তান, ভাই তিন প্রকার কর্তার ক্ষেত্রে একই শব্দ মেহেরবানি মুহাব্বতব্যবহার করা হচ্ছে তা সত্ত্বেও তিনজন কর্তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত হওয়ার ফলে একই শব্দের তিন প্রকার মর্ম গ্রহণ করা হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত”-এর বিষয়টিও মেছালের আলোকে বুঝে নিতে হবে

আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত পাঠানোর অর্থ হল দয়া অনুগ্রহ, স্নেহ-মমতা হেতু নবীজীর প্রশংসা করেন, সম্মান করেন ফেরেশতাগণও সালাত পাঠান কিন্তু উভয়ের সালাত রহমত সম্মান শ্রদ্ধা আপন আপন সত্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পৃথক পৃথক ধরনের আয়াতে কারীমায় এরপর মুমিনদেরকে হুকুম করা হয়েছে তোমরাও সালাত রহমত পাঠাও এর মর্ম আবার আল্লাহ তায়ালার সালাত রহমত এবং ফেরেশতাগণের সালাত রহমত থেকে আলাদা হওয়াই বাঞ্ছনীয়

ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার সালাতের উদ্দশ্যে রহমত পাঠানো ফেরেশতাগণের সালাতের উদ্দেশ্য ইস্তেগফার করামুমিনদের সালাতের উদ্দেশ্যে দোয়া করা হাদিসে বর্ণিত আছে, আয়াত নাজিল হল সাহাবায়ে কেরাম রাদি. আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের তরিকা তো আমাদের জানা হয়েছে (অর্থাৎ নামাজের তাশাহুদে যেটা পড়া হয় السلام عليك أيها النبي و رحمة الله و بركاته)। সালাতের তরিকা আমাদের শিখিয়ে দিন যেটা আমরা নামাজে পড়ব তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুরুদ শরীফ শিক্ষা দিলেন- الهم صل على محمد و على ال محمد كما صليت على ابراهيم و على ال ابراهيم انك حميد مجيد . الهم بارك على محمد و على ال محمد كما باركت على ابراهيم  و على ال ابراهيم انك حميد مجيد .

 

মোটকথাو আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে হুকুম দিয়েছেন তোমরা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত প্রেরণ কর। এর অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বলে দিয়েছেন, তোমাদের সালাত পাঠানোর পদ্ধতি হল, আল্লাহ তায়ালার নিকট দরখাস্ত করবে- তিনি যেন তাঁর সর্বোচ্চ রহমত অধিক থেকে অধিক পরিমাণে চিরকাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজিল করতে থাকেন। কেননা তাঁর রহমতের কোন সীমা-পরিসীমা বা প্রান্ত নেই। এও আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ রহমত যে, আমাদের দরখাস্তের সৌজন্যে হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যে অতিরিক্ত রহমত নাজিল করেন তা আমাদের মতো এই দুর্বল অক্ষম বান্দাদের সাথে তিনি সম্পৃক্ত করে দেন। যেন আমরাই পাঠালাম অর্থাৎ আমাদের দোয়া সেটার কারণ হল। যদিও প্রকৃতপক্ষে রহমত প্রেরণকারী আল্লাহ রব্বুল আলামীন ব্যতীত আর কেউ নয়। কোন বান্দার আবার এই সামর্থ্য আছে যে, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান দরবারে সে দরবারের শান-উপযোগী কোন হাদিয়া পেশ করবে।

দ্রষ্টব্য : “সালাত আলান্ নবী” বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। শরহে হাদিসের কিতাবসমূহে দেখে নিবেন। এ বিষয়ে শায়েখ শামছুদ্দীন সাখাবী রহ. লিখিত اللقول البديع في الصلوة على الحبيب الشفيع  কিতাবটি অতি উত্তম একটি কিতাব। আমি মুসলিম শরীফের শরাহ ফাতহুল মুলহিমে কিছুটা বিস্তারিত লিখেছি।فالحمد لله على ذلك    

[তাফসিরটি হজরত উসমানী রহ.-এর সৌজন্যে]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন