কারামত সত্য
বর্তমান তেহরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত “রাই” নামক একটি শহর রয়েছে। এ শহরে ইমাম মুহাম্মদ রহ.সহ বহু ইসলামী পণ্ডিত, পীর-বুজুর্গ, ওলী-আবদাল জন্মগ্রহণ করেছেন। শহরটি দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদি.-এর খেলাফতকালে অগ্নিপূজারীদের থেকে মুসলমানগণ বিজয় করেন। এ শহরে বসবাসকারী তৃতীয় হিজরির একজন মহান সাধক হলেন, আবু ইসহাক ইবরাহিম বিন আহমাদ বিন ইসমাঈল আলখাওয়াস রহ.। তিনি ছিলেন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আলমাগরিবী (জন্ম : ১৭৯ হি. মৃত্যু : ২৯৯ হি.) রহ.-এর সোহবতধন্য দুনিয়াবিমুখ একজন ওলী। হজরত ইবরাহিম খাওয়াস নামে সমধিক পরিচিত। হজরত ইবরাহিম খাওয়াস রহ. বলেন, “অভ্যাসমত নির্জনতা অবলম্বনের জন্য একবার মরুভ‚মির দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ এক আগন্তুক সফরসঙ্গী হওয়ার অনুমতি চাইল। বাহ্যিক অবয়ব দেখে আমার কেমন অন্যরকম লাগছিল। মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সে বলল, ‘ইবরাহিম! পেরেশান হবেন না। আমি একজন খ্রিস্টান। রোম থেকে আপনার সান্নিধ্য লাভের আশায় এসেছি।’ তার অবয়বে আমার বিরক্তির কারণ বুঝতে পারলাম। বললাম, ওহে পাদ্রী! আমার নিকট তো খানাপিনার কিছু নেই। আমার ভয় হচ্ছে, এই বিজন মরুতে তুমি ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট করবে। উত্তর দিল, ‘হে ইবরাহিম! আপনার বুজুর্গির প্রসিদ্ধি তো জগতময়; আপনি কি-না খানাপিনার চিন্তা করছেন?’ তার এমন ভরসার কথা শুনে আমি আশ্চর্য হলাম। মুখের কথায় অন্তরের বিশ্বাস তার কতটুকু- যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সাথে চলার অনুমতি দিয়ে দিলাম। সাত দিন সাত রাত অতিবাহিত হওয়ার পর পিপাসার তীব্রতা আর সহ্য করা যাচ্ছিল না। পথচলায় বিরতি দিয়ে সে বলল, ‘আপনার ওলীত্বের কথা তো সারা দুনিয়ায় প্রসিদ্ধ তো এখন কোন একটা কারামত দেখান; কারণ পিপাসার কারণে আর পথচলা সম্ভব নয়।’ আমি সিজদায় গিয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে আরজ করলাম, ইয়া ইলাহী! আমাকে এই অমুসলিমের সামনে লজ্জিত করিয়েন না। অমুসলিম হওয়া সত্তে¡ও তার আমার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। আপনি যদি এই কাফেরের নেক ধারণা পূর্ণ করেন; আপনার খাজানায় তো কোন কম হবে না। মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম, একটি থালায় দু’টি রুটি ও দু’ পেয়ালা শরবত। তৃপ্ত হয়ে আমরা সামনে চললাম। আরও সাত দিন পার হলে ভাবলাম- পাদ্রীর পরীক্ষা লওয়া দরকার যেন সে তার অসারতা বুঝতে পারে। সে কিছু বলার পূর্বেই আমি বললাম, হে ঈসায়ী পাদ্রী! এবার আপনার পালা। আপনার ইবাদতের নতিজা দেখান এবং কিছু নিন যেন আমরা খেতে পারি। সে সিজদায় গিয়ে কিছু দোয়া করল, যার পরিণতি হল- একটি থালা প্রকাশ পেল যাতে চারটি রুটি ও চার পেয়ালা শরবত রয়েছে। দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হলাম এবং মনে মনে কিছুটা ঈষান্বিতও হলাম। নিজ অবস্থানের ব্যাপারে খুব পেরেশান হয়ে গেলাম। তাই প্রতিজ্ঞা করলাম, একজন কাফেরের হিম্মতে যা মিলেছে তা গ্রহণ করব না। সে বলল, ‘ইবরাহিম, খাবার গ্রহণ করুন।’ আমি বললাম, কিছুতেই আমি গ্রহণ করব না। সে বলল, ‘কারণ কী?’ আমি বললাম, তুমি এইরূপ কারামতের অধিকারী নও; কেননা কাফেরের দ্বারা কারামত অসম্ভব। শুনে সে বলল, ‘ইবরাহিম, খুশি মনে গ্রহণ করুন। এটা আপনারই কারামত। আমি আপনাকে দু’টি সুসংবাদ শোনাচ্ছি : ১. আমি ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছি- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ। ২. আল্লাহ তা‘আলার নিকট আপনার মর্যাদা অনেক উচ্চৈঃ।’ জানতে চাইলাম কীভাবে? সে উত্তর দিল, ‘আমরা ঈসায়ীরা কারামত সম্বন্ধে কিছু জানি না। আপনি বলায় লজ্জায় আমি মাথা মাটিতে রেখে বললাম, ইয়া ইলাহী! যদি দীনে মুহাম্মদী সত্য হয় এবং আপনার পছন্দনীয় হয় তবে আমাকে দু’টি রুটি ও দু’ পেয়ালা শরবত দান করুন। আর যদি ইবরাহিম খাওয়াস আপনার ওলী হয়ে থাকে তবে আরো দু’ রুটি ও দু’ পেয়ালা দান করুন। মাথা উঠিয়ে দেখি এই থালা’।”
হজরত ইবরাহিম খাওয়াস রহ. তৃপ্তিসহ খেলেন, পান করলেন। ঐ পাদ্রী মুসলমান তো হলোই পরবর্তীতে সে বড় আল্লাহর ওলীও হয়েছিল।
শিক্ষা : আমাদর আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আর আকীদা হল- আউলিয়ায়ে কেরামের কারমত সত্য। তবে কারামত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তার নিজের কোন অধিকার বা ক্ষমতা নেই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় বান্দার সৌজন্যে কখনো দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়মের ঊর্ধ্বে কিছু ঘটিয়ে থাকেন, ঐ সব ঘটনাকেই কারামত বলা হয়। তিনি দোয়া করলেই যে সব সময় ঐ একই বিষয় প্রকাশ পাবে তাও নয়। যখন প্রকাশ পায় আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে নিজেও জানে না যে, আদৌ এ মুহূর্তে কিছু প্রকাশ পাবে কি পাবে না। বা কী প্রকাশ পাবে; কিছুই ওলীর জানা থাকে না। বরং তিনিও প্রকাশ পাওয়ার পর অন্যদের মতই দেখতে পান।
ঐ পাদ্রী যখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত ও ওলীদের সত্যতার ব্যাপারে সৎ উদ্দেশ্যে জানতে চেয়েছে তো আল্লাহ তা‘আলা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। পূর্ণ বিশ্বাসসহ নেক উদ্দেশ্যে দোয়া করলে আমাদের দোয়াও বিফলে যেতে পারে না। লেখক : প্রব
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন