প্রকৃত বাদশাহ


ইসলামের স্বর্ণযুগের পঞ্চম আব্বাসী খলিফা হারুনুর রশীদ [১৭ মার্চ ৭৬৩ থেকে ২৪ মার্চ ৮০৯;  খেলাফতকাল ১৪ সেপ্টেম্বর ৭৮৬ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত] একবার হজ আদায়ান্তে উজিরকে (ফজল বরমাক্কী) বললেন, আমার অন্তর চাচ্ছে কোন আল্লাহওয়ালা বুজুর্গের মোলাকাতে ধন্য হই। : জী হ্যা! আবদুর রাজ্জাক চুন‘আনী [৭৪৪ থেকে ৮২৬ ঈ. মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক নামক ফিকহী বাব আকারে সাজানো প্রথম হাদিসের কিতাবের সংকলক, ভলিউম সংখ্যা ৩১] এখানে আছেন। সাক্ষাতের পর কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে বিদায় গ্রহণের সময় উজিরকে ইশারা করলেন। উজির জানতে চাইল, আপনি কি কারো নিকট ঋণী আছেন? বাদশাহর আদেশে উজির ঋণ আদায়ের দায়িত্ব নিল। বাইরে এসে বাদশাহ বলল, মনে তৃপ্তি পাচ্ছি না। এরচেয়ে বড় কোন বুজুর্গের সাক্ষাত চাই।
উজির জানাল, হাদিস শাস্ত্রের ইমাম সুফিয়ান ইবনে উওয়াইনা [৭২৫ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ৮১৪ ঈ.; ইমাম শাফেয়ীর উসতায, বিশিষ্ট তাবে-তাবেয়ী, ইমাম মালেক রহ.-এর মুয়াত্তার অনুকরণে হাদিসের সংকলন করেছেন] এখানে আছেন। সাক্ষাতের পর বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে বিদায় গ্রহণের সময় উজিরকে ইশারা করলেন। উজির জানতে চাইল, আপনি কি কারো নিকট ঋণী আছেন? বাদশাহর আদেশে উজির ঋণ আদায়ের দায়িত্ব নিল। বাইরে এসে বাদশাহ বলল, এখনো মনে তৃপ্তি পাচ্ছি না। এরচেয়েও বড় কোন বুজুর্গের সাক্ষাত চাই।
উজিরের মনে পড়ল ফুজাইল ইবনে ইয়াজ [৭২৬ থেকে ৮০৩ ঈ. সুফিয়ান ইবনে উওয়াইনা, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, ইমাম আসমায়ী প্রমুখের উসতায] এখন মক্কায় আছেন। বাদশাহকে নিয়ে গেল। তিনি কক্ষে বসে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করছিলেন। দরজায় কড়া নাড়লে জিজ্ঞাসা করলেন কে? ‘আমিরুল মু’মিনিন আপনার সাক্ষাতে এসেছেন।’ ‘আমিরুল মু’মিনিনের নিকট আমার কী প্রয়োজন?’ ‘সুবহানাল্লাহ! হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে রয়েছে: বান্দা নিজেকে নিজে অপমানিত করে না।’ ‘ঠিক আছে, তবে আমার সম্মান শুধু আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনে।’ উজিরের সাথে এরূপ কথোপকথনের পর নেমে এসে দরজা খুললেন; কিন্তু প্রদীপটি নিভিয়ে দিয়ে এককোণে দাঁড়িয়ে গেলেন। বাদশাহ হারুনুর রশীদ অন্ধকারেই মুসাফাহা করলেন। : ‘কতইনা নরম হস্তদ্বয়! যদি জাহান্নামের অগ্নি থেকে বেঁচে যায় ...।’ এটুকু শুনেই হারুনুর রশীদের চোখে কান্নার বান ডাকল। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বেহুঁশ হয়ে গেলেন। হুঁশ ফিরে আসলে আরজ করলেন, ‘হে মহান শায়েখ আমাকে কিছু উপদেশ দিন।’ হজরত ফুজাইল বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনার দাদা হজরত আব্বাস রাদি. রসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আরজ করেছিলেন, আমাকে কোন এলাকার গভর্নর নিযুক্ত করা হোক। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, চাচাজান! আমি আপনাকে এক মুহূর্তের জন্য আপনার নিজের ওপরে গভর্নর নিযুক্ত করলাম। কথার উদ্দেশ্য হল, এক মুহূর্তের খালেস ইবাদত হাজার বছর শাসনকার্য পরিচালনার চেয়ে উত্তম।’ বাদশাহ আরো উপদেশ প্রার্থনা করলেন। হজরত ফুজাইল বলে চললেন, ‘হজরত ওমর বিন আবদুল আজিজকে খলিফা নির্বাচন করা হলে তিনি সালেম বিন আবদুল্লাহ, রজা বিন হাইয়াত, মুহাম্মদ বিন কা‘ব আলকুরাজীকে ডেকে বলেছিলেন, আমি এই বিপদে ফেঁসে গেলাম। এখন আমার করণীয় কী? তারা বলল, যদি কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে মুক্তি পেতে চান তবে- নিজের চেয়ে বয়স্ক মুসলমানকে বাবা, সমবয়স্কদের ভাই ও ছোটদের ছেলে মনে করবেন। ঘরে বাপ, ভাই, ছেলের সাথে যেরূপ আচরণ করা হয় তাদের সাথেও অনুরূপ আচরণ করবেন। এই পুরো ইসলামী সালতানাত আপনার ঘর এবং সকল মাখলুক আপনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।’ এরপর বললেন, ‘আল্লাহকে ভয় করুন, তাঁর হক পূর্বের চেয়ে উত্তমরূপে আদায় করুন।’ পরিশেষে বাদশাহ বললেন, ‘আপনি কি কারো নিকট ঋণী আছেন?’ উত্তর : ‘আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ঋণ আমার গর্দানের বোঝা।’ : ‘আমার উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তি কি আপনার নিকট কিছু পাবে?’ : ‘আল্লাহ তা‘আলার শোকর, তিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তাঁর বান্দাদের নিকট প্রত্যাশা করার মতো প্রয়োজন আমার নেই।’ কোন সুযোগ না পেয়ে বাদশাহ এক হাজার দিনারের একটি থলে হজরত ফুজাইলের নিকট পেশ করে অনুরোধ করলেন, আপনি যেভাবে চান খরচ করবেন। তিনি রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘হারুন আমার এতসব উপদেশ আপনার কোন উপকারে আসেনি; এখনই জুলুম শুরু করে দিয়েছেন।’ ‘আমি কী জুলুম করলাম?’ ‘আমি আপনার নাজাত কামনা করছি; অথচ আপনি আমাকে ধ্বংসের দিকে টানছেন, এও কি জুলম নয়?’  বাদশাহ ও তার উজির কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে এল। হারুনুর রশীদ বলল, “প্রকৃত বাদশাহ তো ফুজাইল ইবনে ইয়াজ।”
উপদেশ : “দুনিয়াবী সম্পদের মোহ ত্যাগ না করলে সত্যিকার সম্মান পাওয়া যায় না।” 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন