মালফুজাত (২)
১. মুখাপেক্ষিতা
নিজ সিদ্ধান্ত যথেষ্ট মনে করে শায়েখের মুখাপেক্ষিতা ছেড়ে দিও না। যে নিজ অভিমতকে
যথেষ্ট ভাবে সে বিভ্রান্ত, লাঞ্ছিত, পদাপসারিত হয়। তোমার আমল, ইখলাস ও বিপদে ধৈর্য ধারণ
যাচাই শেষে শায়েখ যখন অনুমতি দেবেন তখন নিজেকে আরো অধিক মুখাপেক্ষী মনে হবে।
২. আমলের গুরুত্ব
আমলবিহিন ইলম প্রাণবিহিন
শরীরের ন্যায়।
৩. দুনিয়ার পরিচয়
দুনিয়া আল্লাহর দুশমন। কি
করে তুমি তাকে ভালোবাসতে পার? প্রিয়পাত্রের-মাশুকের শত্রুর প্রতি তো স্বভাবতই ঘৃণা থাকার কথা। দুনিয়া
পুঁতিগন্ধময় একটি বিকৃত লাশ; কিন্তু ঐশ্বর্য লালসা মোহনীয় সামগ্রী দিয়ে জৌলুসপূর্ণ করা হয়েছে। ফলে অচেতন
ধোঁকায় পড়েছে আর সচেতন বুদ্ধিমানরা আকণ্ঠ পঙ্কিলতাময় এই অপবিত্র থেকে যোজন যোজন
দূরে সরেছে।
৪. মুরব্বীর
যোগ্যতা
পরহেজগার হওয়ায় ব্যাপারে
সাহায্য এবং সত্য অবলম্বন ও সবর এখতিয়ারের উপদেশ যদি না পাও; বুঝতে হবে তিনি ইসলাহী
মুরব্বী হওয়ায় যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারেননি।
৫.
ঈমানের দৃঢ়তা
যে বিশ্বাস করে,
"আল্লাহর দৃষ্টি হতে লুকানো সম্ভব নয়" সে নাফরমানী করতে লজ্জাবোধ করে।
যে বিশ্বাস করে, "আল্লাহ পাক রিজিকের জিম্মাদার" সে রিজিকের পিছনে ছুটে বেড়ায় না।
যে বিশ্বাস করে, "নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু হবে" সে মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে সদা ব্যস্ত থাকে।
যে বিশ্বাস করে, "আল্লাহ পাক রিজিকের জিম্মাদার" সে রিজিকের পিছনে ছুটে বেড়ায় না।
যে বিশ্বাস করে, "নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু হবে" সে মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণে সদা ব্যস্ত থাকে।
৬. বাতেনী জিহাদ
বাতেনী জিহাদ হল, নফস খাহেশ তবিয়াত ও শয়তানের
বিরুদ্ধে লড়াই করা, নাফরমানি ও
ভুলভ্রান্তির জন্য তওবা করা, তার ওপর স্থির থাকা এবং যৌন উত্তেজনাকর ও অন্যান্য হারাম কাজসমূহ থেকে বিরত থাকা।
বাতেনী জিহাদ সার্বক্ষণিক ও পৌনঃপুনিক।
৭.
নাই, নাই, নাই...
কোন নির্জন কুঠুরিতে দরজা
বন্ধ করে জিকিরে বসুন আর ভাবুন দুনিয়ার সব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কবর জগতে প্রবেশ
করেছেন। এখন একমাত্র মাওলায়ে পাক ছাড়া আর কেউ নাই, কিছু নাই। নাই, নাই, নাই...
৮. মু'মিনের উপার্জন
মু'মিন ব্যক্তি দুনিয়া আখেরাত
উভয় ক্ষেত্রেই উপার্জন করে। তবে দুনিয়া ততটুকুই গ্রহণ করে যতটুকু অপরিহার্য।
ততটুকুতেই তৃপ্ত যতটুকু একজন মুসাফির বহন-কষ্ট সত্ত্বেও নিরুপায় হয়ে গ্রহণ করে।
৯. মাওলাকেই চায়
আল্লাহ তা'আলার পরিচয়প্রাপ্ত মুমিন
আল্লাহর কাছে না দুনিয়া চায়, না আখেরাত; বরং সে তার মাওলার
কাছে মাওলাকেই চায়।
১০. অস্থিরতা বনাম স্থিরতা
দুনিয়া অস্থির একটি জগতের
নাম। তবে এখানেও স্থিরতা অর্জনের উপায় আছে। বান্দা যদি গুনাহ থেকে পূর্ণ বেঁচে
থাকতে শিখে যায়, তবেই শত অস্থিরতার
মাঝেও আসমানী স্থিরতা অর্জন হয়।
১১. বদঅভ্যাস
বারবার চেষ্টার পরও কোন
বদঅভ্যাস ছাড়া সম্ভব না হলে তা শায়েখকে জানাতে (লিখে/বলে) হবে। ডাক্তারের ন্যায়
কোন রোগের কারণে রোগীকে ঘৃণা করা শায়েখের আদত নয়। রোগী সুস্থ হওয়ার পর ডাক্তার
যেমন ভুলে যান; আত্মিক ডাক্তারও
তেমনই।
১২. গুনাহ ত্যাগ
নিয়মিত জিকির গুনাহ থেকে
বাঁচতে সাহায্য করবে; তবে ভুলে যাবেন না, গুনাহ ত্যাগের সংকল্প এবং
সে অনুযায়ী প্রচেষ্টা আপনাকেই করতে হবে।
১৩. তাকওয়ার
আলামত
১, জিহ্বা ব্যবহারে সতর্কতা
(খাবার গ্রহণ ও কথা বলা)। ২, অন্তরের পবিত্রতা (হিংসা, বিদ্বেষ, বুগজ, আদাওয়াত)। ৩, দৃষ্টির হেফাজত। ৪, হাতের হেফাজত। ৫, পায়ের হেফাজত। ৬, ইবাদত-বন্দেগীসহ জীবনের সব
কাজ একমাত্র রেজায়ে মাওলার উদ্দেশ্যে এবং সঠিক পদ্ধতি জেনে করা।
এই গুণগুলো অন্তরে তাকওয়ার আলামতস্বরূপ।
এই গুণগুলো অন্তরে তাকওয়ার আলামতস্বরূপ।
১৪. আল্লাহ
ব্যতীত নেই
আল্লাহ রব্বুল আলামিন
ব্যতীত স্রষ্টা নেই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন ব্যতীত উপকারকারী নেই। আল্লাহ রব্বুল
আলামিন ব্যতীত ক্ষতিকারী নেই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন ব্যতীত ইজ্জত দানকারী নেই। আল্লাহ
রব্বুল আলামিন ব্যতীত অপদস্তকারী নেই।
১৫. প্রশান্তি ও
তৃপ্তি
দুনিয়ার ব্যাপারে
নির্লোভ-নির্মোহ হতে না পারলে, মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক তৃপ্তি লাভ হয় না। লোভ করে মোহে পড়ে থেকে যদি
তাকদির হতে বেশি ভোগ করা যেত; তোমার দুনিয়ার পিছনে ছোটার ওপর আক্ষেপ ছিল না। কিন্তু ...
১৬. তাওবার একটি
শর্ত
তাওবার একটি শর্ত:- ইচ্ছাকৃত কোন পাপেই আর লিপ্ত হতে পারবে না। ভুলক্রমে হয়ে
গেলে জরিমানা হিসেবে নফল নামাজ, নফল সদকা করে ক্ষমা চান, পুনরায় তাওবা করুন, আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন, আল্লাহ তা'আলার নিকট সাহায্য চান।
১৭.
মুহাব্বত বনাম আফসোস
মানুষের সাথে মুহাব্বতের
সম্পর্ক তৈরি করে বহুজনকে আফসোস করতে হয়েছে; আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সাথে মুহাব্বতের সম্পর্ক তৈরি করে আজ পর্যন্ত কাউকে
আফসোস করতে হয়নি।
১৮. তাড়াহুড়ো
পরহেযগারী অবলম্বনের একটি
শর্ত সব কাজে স্থিরতা। কারণ তাড়াহুড়ো করলে অনিচ্ছাকৃত ভুলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
১৯. ছায়া ও পাখি
দুনিয়া ও আখেরাত ছায়া ও পাখির ন্যায়। পাখি ধরতে পারলে ছায়া তোমার পায়ের তলায়
আসবেই। ছায়ার পেছনে শত দৌড়ালেও ছায়া বা পাখি কোনটাই পাবে না।
২০.সত্যিকার
পিপাসা
মাখলুক-সংস্রব ত্যাগ করে
খালেকের ইবাদতে পূর্ণ মনোনিবেশ করলেই মুনাজাতে ইলাহীর মধুরতা ও মিষ্টতা অনুভব করা
যায়। আল্লাহর সান্নিধ্য-পিপাসা মানব-সাহচর্য থেকে বিরত না রাখলে, তাদের সাথে
ওঠাবসা-কথাবার্তার ব্যাপারে মনে ভীতির সঞ্চার না হলে: বুঝতে হবে, সত্যিকার পিপাসা তৈরি হয়নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন