মালফুজাত (১)

১. ঈমানের দৃঢ়তা
যে বিশ্বাস করে, "আল্লাহর দৃষ্টি হতে লুকানো সম্ভব নয়" সে নাফরমানী করতে লজ্জাবোধ করে। যে বিশ্বাস করে, "আল্লাহ পাক রিজিকের জিম্মাদার" সে রিজিকের পিছনে ছুটে বেড়ায় না।

২. প্রকৃত মনুষ্যত্বের জাগরণ
কেবল আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও গতানুগতিক ধর্মাচরণ দ্বারা প্রকৃত মনুষ্যত্বের জাগরণ সম্ভব নয়। নিজের মধ্যে অবস্থানকারী নফসরূপী শত্রুই শয়তানের বাহন। খোদাভীতির অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাকে পাহারা দিতে হয়।

৩. সবুজ সিগন্যাল
রিপু-কামপ্রবৃত্তি তোমার প্রধান শত্রু। এর সবুজ সিগন্যাল না পেলে ইবলিসও তেমন সুবিধা করতে পারে না। সুতরাং অতি ভোজ ও বেপর্দার মাধ্যমে কামকে শক্তিশালী করো না।

৪. গোলাম নয় মাখদুম
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে খেদমত নেওয়ার জন্য বিবেকের সৃষ্টি; গোলাম হওয়ায় জন্য নয়। প্রবৃত্তিজাত প্রেম-ভালোলাগা-ভালোবাসা মা'রেফাতে ইলাহী শূন্য হৃদয়ের ক্যান্সার। প্রতিষেধক হল, দৃষ্টি ও চিন্তাকে সর্বক্ষণ শাসনে রাখা।

৫. হিংস্র প্রাণীর চেয়ে মারাত্মক
অন্তরে আল্লাহর ভয় ও পরকাল সম্পর্কে পরিপূর্ণ বিশ্বাস জন্মানো ব্যতীত পশুজীবনের সাথে মানুষের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বরং বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী হওয়ায় অবিশ্বাসী মানব সন্তান হিংস্র প্রাণীর চেয়ে মারাত্মক হয়ে থাকে।

৬. জাকেরের শ্রেণি
জিকিরকারী তিন শ্রেণির হয়ে থাকে। ১. মুখে জিকির করে; অন্তরে ফিকির তৈরি হয় না। ২. মুখে জিকিরের সাথে অন্তরেও ফিকির তৈরি হয়। ৩. যখন মুখে জিকির করতে না পারে তখনও অন্তর ফিকিরে পূর্ণ থাকে।

৭. ৩টি অভ্যাস
আত্মার শান্তি প্রত্যাশী হলে গুনাহ ত্যাগ কর। দীন ও ঈমানের সংরক্ষণ চাইলে অধিক দুরুদ পাঠে অভ্যস্ত হও। শারীরিক সুস্থতা কামনা করলে অল্প আহারের বিকল্প নেই।

৮. ষষ্ঠাঙ্গের জিকির
ছয়টি অঙ্গের পৃথক পৃথক জিকিরের ব্যাপারে সচেতন না হয়ে শুধু তাসবিহাত আদায়ে থোরাই ফায়েদা হাসিল হবে।
} অন্তর=আল্লাহ তা'আলার মারেফাত-মুহাব্বত লাভের আগ্রহ।
} চোখ=আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন ও সৃষ্টিজগতে বিদ্যমান নিদর্শনাবলি দেখে দেখে তাঁর কুদরত অনুভব করা।
} কান=রহমানের কালাম-জিকির শ্রবণ।
} জবান=কোরআন তেলোওয়াত।
} হাত=দুর্বল-অসহায়কে সাহায্য করা।
} পা=হারামাইন শরিফ, বুজুর্গানে দীন, আত্মীয়স্বজনের জিয়ারত

৯. আল্লাহর আশ্রয়
বান্দার উচিত পৃথিবীর সকল আশ্রয় ত্যাগ করে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন তার দুঃখ-কষ্ট  অবশ্যই লাঘব করা হবে; মঙ্গলজনক উপায়ে। আমি যা কামনা করি, তাতে মঙ্গল নাও থাকতে পারে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। সর্বদ্রষ্টা।

১০. চূড়ান্ত বিনয়
আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে কান্নাকাটি করা একটি বিশেষ ইবাদত। কারণ এটা বিনয় ও অসহায়ত্ব প্রকাশের চূড়ান্ত রূপ।

১১. বিনা কষ্টে রুজি
তুমি যখন আল্লাহ তা'আলাকে প্রিয় ভাববে এবং তিনি তোমাকে প্রিয় ভাববেন, তখন তুমি তোমার ভাগের রুজি বিনা কষ্টে পঙ্কিলতামুক্তভাবে পেয়ে যাবে।

১২. নেক কাজে উৎসাহ
যদি হৃদয়কে বিশুদ্ধ-পবিত্র রাখতে চাও, যদি নেক কাজে উৎসাহ উদ্দীপনা লাভ করতে চাও অবশ্যই দৃষ্টিকে অবনত রাখ।

১৩. উভয়টি লাগবে
একটি গাড়ি চলতে জ্বালানি হিসেবে অকটেন/পেট্রোল/ডিজেলের পাশাপাশি মবিলের প্রয়োজন সর্বজন জ্ঞাত। তেমনি সুলুকের পথে চলতে মামুলাতের পাশাপাশি শায়েখের সাথে মোলাকাত/যোগাযোগ আবশ্যক।

১৪. ঈমানের দুর্বলতা
আল্লাহ রব্বুল আলামিনের দরবারে মুনাজাতের আদব হল, মাকসাদটি পূরণের আশায় দ্বিতীয় কাউকে না জানানো। কোন পদ্ধতি কল্পনায় আসতে না দেওয়া। আল্লাহ তা'আলা "কাদেরে মুতলাক" উত্তম ফয়সালা অবশ্যই করবেন- পূর্ণ  আস্থাশীল হতে না পারা মূলত ঈমানের দুর্বলতা।

১৫. সুতরাং সাবধান
তাসবিহাত আদায়ে গাফলত অন্তরকে গাফেল করে। অন্তরের গাফলত নফলিয়্যাতে অলস করে। নফলের অলসতা সুনান ওয়াজিবাতে অস্থির করে। সুনান ওয়াজিবাতের অস্থিরতা ফরজে অমনোযোগী করে। ফরজের অমনোযোগিতা গুনাহে প্রলুব্ধ করে। সুতরাং সাবধান!

১৬. সুস্থতা অনুসন্ধান
হে প্রিয়! তোমার ডাক্তার তোমাকে বলেন, "এ লোকমাটি খেয়ো না; এতে বিষ রয়েছে। এ লোকমাটি খাও; এতে দাওয়াই রয়েছে।" অথচ তুমি তার বিপরীত করে সুস্থতা অনুসন্ধান কর।

১৭. নাজাত
উকবা বিন আমের রাদি. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, নাজাত কীভাবে লাভ করব? ইরশাদ হল- জবানকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। যত বেশি সম্ভব নিজ ঘরে অবস্থান কর। নিজ গুনাহের জন্য কাঁদ। 

১৮. মুক্তির আশা
আল্লাহ তা'আলাকে গাইরুল্লাহর ওপর স্রষ্টাকে সৃষ্টির ওপর দীনকে খেয়াল-খুশির ওপর প্রাধান্য না দিয়ে কল্যাণ ও মুক্তির আশা করো না।

১৯. আক্ষেপ
আক্ষেপ, তোমার জিহ্বা তাকওয়ার ডাক দিচ্ছে আর তোমার অন্তরে চলছে পাপাসক্তি।

২০. নফস কলব রুহ
নফসকে শারীরিক কু-চাহিদা থেকে মুক্ত রাখতে পারলে কলব কু-প্রভাব মুক্ত হয়। কলব মুক্ত হলে রুহ মুক্ত হয়। কু-প্রভাব মুক্ত রুহ দরবারে ইলাহী হতে দানকৃত ঈমান, আমলে সালেহ, ইখলাস, ফিকর গ্রহণে সক্ষম হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন