ঈমান বৃদ্ধিকারী কয়েকটি তত্ত্ব - ২
ঈমান বৃদ্ধিকারী কয়েকটি তত্ত্ব - ২
৪.
সকল
ফেরেশতা এ
আমল
করেন
و ملاءكته শব্দে ইযাফত ইসতেগরাকের অর্থে। মালাইকা তথা ফেরেশতাকুল শব্দটিকে আল্লাহ তায়ালা উদ্দিষ্ট এমন সর্বনামের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সকল ফেরেশতা এ কাজে অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর “সালাত” প্রেরণে শামিল হয়ে গিয়েছেন। সকলকে শামিল করণের অর্থ আদায়ের জন্য الملاءكة “আলমালাইকাতু”
বললেও যথেষ্ঠ ছিল; মালাইকাতুহু (আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতা) বলার দ্বারা ফেরেশতাগণের সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। আর ফেরেশতাগণকে এস্থানে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে হুজুর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামেরই বড়ত্ব-সম্মান-মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। এমন সম্মানী ফেরেশতারা তাঁর প্রতি “সালাত” প্রেরণ করেন। আরবিতে প্রবাদ আছে, ان العظيم لا يصدر منه الا عظيم সম্মানী লোক যা করেন তা অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ কাজ।
“মালাইকাতুহু” ফেরেশতাগণ শব্দটিকে আল্লাহ তায়ালা উদ্দিষ্ট সর্বনামের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করণের মাধ্যমে ফেরেশতাকুলের সংখ্যাধিক্যেরও প্রকাশ ঘটেছে। তাঁরা সংখ্যায় এতই বেশি যা কেবল আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কেউ কল্পনাও করতে পারে না। এত অধিক সংখ্যক এমন সম্মানী সৃষ্টি ফেরেশতাকুলের একটি প্রধান কাজ যখন– তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত প্রেরণ। আবার মুহূর্তে মুহূর্তে নতুনভাবে তারা এ কাজটি করে থাকেন- এ থেকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের মহান সম্মান সুউচ্চ মর্যাদার মহানত্ব ও উচ্চতা সম্বন্ধে কিছুটা কল্পনা করা যাক।
هذا ابلغ تعظيم و انهاه و اسمله و اكمله و ازكاه
৫. আল্লাহ তায়ালা সালাত অবতীর্ণ করা দ্বারা কী উদ্দেশ্য
আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর ফেরেশতাকুল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরুদ পাঠ করেন- এর দ্বারা কী উদ্দেশ্য সে সম্পর্কে ওলামায়ে উম্মতের কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা দুরুদ পাঠান অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সামনে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করেন, তা‘জিম প্রকাশ করেন। যেমনটা ইমাম বুখারী রহ. তাঁর কিতাবে মুহাদ্দেস আবুল আলিয়া ও অন্যান্যের মারফত হজরত রবি‘ বিন আনাস রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। একই ধরনের বর্ণনা শুআবুল ঈমানেও রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর তা‘জিম করেন- এর অর্থ হল দুনিয়াতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা-গুণকীর্তন বৃদ্ধি করা, তাঁর দীনকে বিজয়ী করা, তাঁর শরীয়তের ওপর আমলের ধারাবাহিকতা চালু রাখা। আখেরাতে উম্মতের ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ কবুল করা। তাঁকে মহান আজর ও সওয়াব, প্রতিদান ও পুরস্কার প্রদান করা, তাঁকে মাকামে মাহমুদ দান করে শুরু থেকে শেষ সকলের ওপর তাঁর সম্মান প্রকাশ করা, সকল নিকটবর্তীগণের মধ্যেও তাঁকে সর্বাগ্রে স্থান দান করা। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম।
বর্ণিত এই অর্থের ওপর এ প্রশ্ন উত্থাপন অনুচিত হবে যে, দুরুদ তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের পরিবার পরিজন ও সাহাবায়ে কেরামের জন্যও পাঠ করা হয়ে থাকে- তবে কি আল্লাহ তায়ালা নবী-পরিবার-সদস্য ও সাহাবায়ে কেরামের শানেও এরূপ করেন? এ প্রশ্ন অর্থহীন কেননা প্রত্যেকের তা‘জিম আর সম্মান তার স্তরভেদে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালাও নবীপরিবার ও সাহাবায়ে কেরামের তা‘জিম তাদের স্তর অনুযায়ী করবেন এবং নবীজীর শান, মান, মর্যাদা, মর্তবা আপন স্থানে বহাল থাকবে- এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আর আকিদা।
ফেরেশতাকুলের দুরুদ প্রেরণের অর্থ হল, তাঁরা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দোয়া করা। হজরত আবুল আলিয়া থেকে আবদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনু আবি হাতিম এমনটাই রেওয়ায়েত করেছেন।
দুরুদের অর্থ সম্বন্ধে দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হল, আল্লাহ তায়ালা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করা। এবং এটা বিশেষ খুসুসি রহমত। দলিল হল, আয়াত নাজিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম আয়াতে আদেশকৃত “সালাত” প্রেরণের পদ্ধতি জানতে চেয়েছেন। যদি এটা সাধারণ রহমতই উদ্দেশ্য হত তাহলে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করতেন না; কেননা রহমতের দোয়া السلام عليك ايها النبي و رحمة الله و بركاته তো তাঁরা পূর্বেই শিখেছেন। আর
ফেরেশতাগণের “সালাত” প্রেরণের অর্থ হল, তাঁরা হুজুর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের জন্য ইস্তেগফার করা।
আয়াতে উল্লেখ يصلون একই
সাথে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ব্যবহার হওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে ওলামায়ে কেরাম তাফসিরে রুহুল মা্আনী দেখুন। আল্লামা আলুসী রহ. বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। জেনারেল ভাইগণ যদিও রুহুল মাআনী দেখা সম্ভব নয়; আপনারা তাফসিরে উসমানী দেখতে পারেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন