ঈমান বৃদ্ধিকারী কয়েকটি তত্ত্ব-৩

ঈমান বৃদ্ধিকারী কয়েকটি তত্ত্ব-৩

. তাঁকে তাজিম করো   

"يا ايها الذين امنوا صلوا عليه" اي عظموا شأنه عاطفين عليه فانكم اولى بذالك .

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরাও হৃদয়ের পরম শ্রদ্ধা-আগ্রহ আন্তরিক মহব্বতের সাথে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করো-তাজিম করো তোমাদের জন্যই এটা সর্বাধিক আবশ্যক

"صلوا عليه" (সল্লু আলাইহির) পূর্বোক্ত প্যারায় বর্ণিত অর্থ তখনই গ্রহণ করতে হয় যদি এর আগে ৫নং অনুচ্ছেদ: “আল্লাহ তায়ালা সালাত অবতীর্ণ করা দ্বারা কী উদ্দেশ্য”- শিরোনামে প্রদত্ত দুটি অর্থের প্রথম অর্থ- আল্লাহ তায়ালার সালাতের উদ্দেশ্য নবীয়ে কারী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করেন-তাজিম প্রকাশ করেন এই অর্থ গ্রহণ করা হয় একই অর্থসল্লু”-তেও প্রযোজ্য হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাজিম প্রকাশ করো

এই তাফসীরের আলোকেসল্লু আলাইহিমুমিনদের উদ্দেশ্য করে কৃত এই আদেশের অর্থ এই নয় যে, তোমরা কেবল اللهم صل على النبي বলে দুরুদ পাঠাতে থাকো। আর যারা “صلوا عليه” –এর তাফসীর “দুরুদ পড়া” করেছেন তাদের উদ্দেশ্যও এই যে, ঈমানওয়ালাদেরকে যে তাজিম প্রকাশ করতে বলা হয়েছে তা اللهم صل على النبي ইত্যাদি দুরুদ পাঠের দ্বারা আদায় হয়ে থাকে। কেননা আমাদের এই শক্তি নাই যে, আমরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের তাজিমের হক আদায় করব। তাই আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট দরখাস্ত পেশ করছি তিনি যেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের আজমত-তাজিম-শান তথা মান-মর্যাদা-ইজ্জত আরো বৃদ্ধি করেন।

এমনইভাবে যেসব হাদীসে মোবারকায় সাহাবায়ে কেরাম রাদি. সালাত পাঠানোর পদ্ধতি জিজ্ঞাসা করেছেন, আর নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম দুরুদ পাঠের বাক্যাবলি (বিশেষত দুরুদে ইবরাহিমী) ইরশাদ করেছেন; এসব হাদীসও “صلوا عليه” –এর তাফসীর নয়। বরং পদ্ধতির বর্ণনা। অর্থাৎ মূল হুকুম হল তোমরা আন্তরিকতা ও মহব্বতের সাথে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের তাজিম প্রকাশ করো। এই হুকুমের ওপর আমল করার উপায়-তরিকা-পদ্ধতি হল দুরুদ পাঠ করো।اللهم      صل على محمد বলো। আল্লাহ তায়ালার নিকট তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের “শানের তাজিম”-এর জন্য দোয়া করো। হজরত সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্ন “كيف نصلى” (আমাদের দুরুদ পাঠানোর পদ্ধতি কী হবে?) থেকেও এমনটাই অনুমিত হয়। প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিল দুরুদের পদ্ধতি জানা। সাহাবায়ে কেরাম আয়াতে কারীমা নাজিল হওয়ার পর এটাতো বুঝেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা ও ফেরেশতাগণ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরুদ পাঠানোর অর্থ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের সম্মানের উপযোগী তাজিম আদায় করা। কিন্তু তারা এটা জানতেন না যে, আল্লাহ তায়ালার হুকুম "صلوا عليه" অনুযায়ী কোন উপায়ে এমন তাজিম প্রকাশ করবেন যদ্বারা হুকুমের ওপর আমল করা হয়ে যায়। তাই তারা তাজিমের পদ্ধতি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞাসা করেছেন। উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম -যিনি তাদের প্রতি অনেক বেশি দয়ালু মেহেরবান ছিলেন- তাদেরকে হুকুম আদায়ের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি শিখিয়ে দিলেন। তোমরা বল, " اللهم صل على محمد"এ শিক্ষার মর্মার্থে এও বিদ্যমান, তোমরা আমার শানের উপযোগী তাজিম প্রকাশে অক্ষম। অতএব তোমরা আমার ঐ তাজিমের দোয়া কর। আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করো। সুতরাং আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয়- দুরুদ শরীফ পাঠকারী ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের সর্বোন্নত তাজিম আদায় করে। কেননা সে তার এই অক্ষমতার স্বীকারোক্তি দিচ্ছে যে, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের শানোপযোগী তাজিম প্রকাশের যোগ্য নই। তাই আমি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করছি। প্রবাদ আছে, অক্ষম বিষয়ে অক্ষমতা স্বীকার করে নেওয়াই সর্বোচ্চ সক্ষমতা। আরবীতে বলে, العجر عن درك الادراك ادراك

আল্লামা আলুসী রহ. এই তাফসীর করার পর বলেন, আমাদের উল্লিখিত তাফসীরের কাছাকাছি তাফসীর বড়দের থেকেও বর্ণিত রয়েছে। আবদুল ইয়ামান বিন আসাকির রহ. বর্ণনা করেন, “যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর নবীর ওপর দুরুদ পাঠানোর নির্দেশ দিলেন- নবীজীর সুউচ্চ মর্যাদা ও আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা এতদ্বয়ের উভয়টি অনুধাবনে আমরা অক্ষম। তাই পুরো বিষয়টি আমরা আবার আল্লাহ তায়ালারই নিকট সোপর্দ করলাম। الهم صل انت على رسولك

হে আল্লাহ! আপনিই আপনার নবীর ওপর দুরুদ পাঠান। সালাত নাজিল করেন। কেননা আপনিই জানেন, তাঁর শান উপযোগী তাজিম কী। এবং আপনি তার জন্য কী চাচ্ছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম। পরিশেষে আল্লামা আলুসী রহ. লিখেছেন, সম্ভবত আমাদের তাফসীরে বিষয়টি এই তাফসীরের চেয়ে অধিক স্পষ্ট।   

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন