নববী জবানে দুরুদের ফাজায়েল ০৫
নববী জবানে দুরুদের ফাজায়েল ০৫
সালাত ও সালামের স্পেশাল ফোর্স
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতাগণের মধ্যে কতক আছেন যারা সবসময় জমিনে বিচরণশীল থাকেন। তাঁরা আমার নিকট আমার উম্মতের পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেন।
[হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদি./সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-১২৭৯/দারুল কুতুব আলইলমিয়্যাহ, বৈরুত।]
যেখানেই থাক দুরুদ পাঠাও
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন, তোমরা যেখানেই থাকো আমার ওপর দুরুদ পাঠাও। নিঃসন্দেহে তোমাদের
দুরুদ আমার নিকট পৌঁছে যায়।
[হজরত হাসান রাদি. / আল মুজামুল আওসাত হাদিস
নং-৩৬৫/ দারুল হারামাইন, কায়রো।]
দুরুদবিহীন ঘর কবরস্থানস্বরূপ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা নিজেদের ঘরসমূহকে কবরস্থান বানিও না। এবং আমার কবরকে ঈদগাহ (আনন্দ-উৎসবের স্থান) বানিও না। বরং আমার ওপর দুরুদ পাঠ করতে থাকো। তোমরা যেখানেই থাকো; তোমাদের দুরুদ আমার নিকট পৌঁছে যাবে।
[হজরত আবু হুরাইরা রাদি./সুনানে আবি দাউদ হাদিসনং-২০৪২/ দারুল কুতুব আলইলমিয়্যাহ বৈরুত।]
ফায়েদা: ঈদের দিন নির্দিষ্ট থাকে। মানুষ ঐ নির্দিষ্ট দিনে সমবেত হয়। রওজায়ে আকদাসের সাথে এরূপ যেন না হয় যে কিছুদিন নির্দিষ্ট থাকলো আর শুধুমাত্র ঐ দিনগুলোতেই তোমরা রওজায়ে পাকে একত্রিত হলে। বরং দূরে থাক আর কাছে থাক সর্বদা দুরুদ ও সালাম পড়তে থাকো।
জুমার রাত ও দিনে দুরুদের পরিমাণ বাড়াও
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন ও জুমার রাতে আমার ওপর অধিক পরিমাণ দুরুদ শরীফ পাঠাও। (কেননা) যে ব্যক্তি আমার ওপর (একবার) দুরুদ পাঠায় আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।
[হজরত আনাস রাদি./ আসসুনানুল কুবরা লিল বাইহাকি হাদিস নং ২৭৬৯/ দারুল হাদিস, কায়রো।]
দেহ মুবারক মাটির জন্য হারাম
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, তোমাদের উত্তম দিনসমূহের মধ্যে জুমআ একটি। এ দিনেই- আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছে। এ দিনেই "নফখা" দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে।
এদিনেই “সা‘কাহ” প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে (যদ্বারা
সমস্ত বনি আদম ধ্বংস হয়ে যাবে)। সুতরাং এদিনে (শুক্রবারে)আমার ওপর অধিক দুরুদ পাঠ কর। কেননা তোমাদের দুরুদ আমার সামনে পেশ করা হবে।
সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের দুরুদ আপনার সামনে কীভাবে পেশ করা হবে; অথচ আপনি (আপনার দেহ মুবারক) পঁচে-গলে যাবেন? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম উত্তর করলেন, আল্লাহ তায়ালা মাটির জন্য নবীগণের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।
[আউস ইবনে আউস আউস রাদি./ আবু দাউদ হাদিস নং ১০৪৭/ দারুল কুতুব আলইলমিয়্যাহ, বৈরুত।]
দীর্ঘ সেজদা
(একবার) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম বাইরে তাশরিফ আনলেন। বাগানের দিকে যেতে থাকলেন। (আমিও তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করলাম।) এক পর্যায়ে তিনি বাগানে প্রবেশ করলেন। বাগানে প্রবেশ করেই কেবলামুখী হলেন এবং সেজদায় চলে গেলেন। অনেক দীর্ঘ সেজদা করলেন। এত দীর্ঘ করলেন যে, এক সময় আমার মনে এই ধারণা তৈরি হল- না জানি আল্লাহ তায়ালা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের জান কবজ করে নিয়েছেন।
এই ধারণার বশবর্তী হয়ে দেখার জন্য আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে (পেছনে) বসলাম। (আমি বসেই রইলাম) এক সময় তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম মাথা মোবারক উঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কে? আমি উত্তর করলাম, আবদুর রহমান। ইরশাদ করলেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, 'ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এত দীর্ঘ সেজদা করেছেন যে, আমার আশঙ্কা হচ্ছিল না জানি আল্লাহ তায়ালা সেজদার মধ্যে আপনার রূহ কবজ করে নিয়েছেন। নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, জিবরীল আ. আমার নিকট এসে আমাকে সুসংবাদ শোনালেন যে, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- (হে মুহাম্মদ!) যে বান্দাহ আপনার ওপর দুরুদ পাঠ করবে আমি তার ওপর রহমত নাজিল করব। যে আপনাকে সালাম পাঠাবে আমি তাকে সালাম পাঠাব। সুতরাং (এই সুসংবাদের ফলে) আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের জন্য আমি (এত দীর্ঘ) সেজদা করেছি।
[হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদি./ মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং- ১৬৬৪/ দারুল হাদীস কায়রো।]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন