উম্মতের জন্য সালাত

উম্মতের জন্য সালাত

হজরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও ফেরেশতাগণ ব্যতীত অন্যদের উদ্দেশ্যে “সালাত” পাঠ করা যাবে কি-না, এ বিষয়টি নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতের ভিন্নতা ব্যাপক। বলা হয়, যেসব মাসলা সম্বন্ধে ওলামায়ে কেরামের তভিন্নতা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম মাসআলা এটি।

অন্যদের উদ্দেশ্যে সালাত পাঠ বিষক আহলে ইলমের মতামত:-  

১/ শর্তহীন জায়েজ। এ মতের স্বপক্ষে প্রমা ক) যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরনুল কারীমে ইরশাদ করেন:

هو الذي يصلى عليكم و ملئكته

) নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

اللهم صل على آل ابی اوفی

আয় আল্লাহ! আবু আওফার পরিবারের ওপ রহমত বর্ষণ করুন।

গ) নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠিয়ে বলা:

اللهم اجعل صلوتك ورحمتك على ال سعد بن عبادة

আয় আল্লাহ! সাদ ইবনে বাদার পরিবারের ওপর আপনার পক্ষ থেকে সালাত ও রহমত বর্ষণ করুন।

ঘ) সহিহ ইবনে হিব্বান-এ নিচের হাদিসটিকেও সহিহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ان امرأة قالت للنبي صلى الله عليه وعلى اله وسلم صل على وعلى زوجى ففعل

একজন নারী নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলা আলিহি ওয়াসাল্লামের নিকট- আরজ করল, আমার ও আমার স্বামীর জন্য 'সালাত' প্রার্থনা করুন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম তাই করলেন।

) মুসলিম শরীফে রেওয়ায়ে বিদ্যমান:

إن الملائكة تقول لروح المؤمن : صلى الله عليك وعلى جسدك

ফেরেশতাগণ মুমিনের রূহকে বলে, আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার শরীরের ওপর 'সালাত'  নাজিল করুন।

বর্ণিত আয়াতে কারীমা ও হাদিস চতুষ্ঠয়ে সালাত শব্দের ব্যবহার আম্বিয়া ও ফেরেশতা ব্যতীত সরাসরি উম্মত ও ইনসানের সাথে হয়েছে।

২/ স্বতন্ত্রভাবে জায়েজ নাই। তবে প্রথমে আম্বিয়া-ফেরেশতার উল্লেখ থাকলে তারপরে সংযুক্ত করা জায়েজ। এই সংযুক্ত শুধু তাদেরকেই করা যাবে যাদের কথা নসে (হাদীস শরীফে) উল্লেখ রয়েছে।

৩/ স্বতন্ত্রভাবে জায়েজ নাই। তবে সংযুক্ত পদ্ধতিতে “নস” এর শর্তারোপ ব্যতীত যে কাউকে উল্লেখ করা যাবে।

মূলত শুরু থেকেই "সালাত ও সালাম" হুজুর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলা  আলিহি ওয়াসাল্লাম ও হজরতে আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণের শানে ব্যবহার হতে হতে তাদের শে‘আর-প্রতীকে পরিণত হয়েগিয়েছিল।

“আজ্জা ও জাল্লা”জাল্লা শানুহু” এ জাতীয় পুত-পবিত্রতার ঘোষণাবাচক শব্দ যেমন আল্লাহ তায়ালার নামের সাথে নির্দিষ্ট-নির্ধারিত-প্রতীকে পরিণত। তেমনই একটা সময় পর্যন্ত “সালাত-সালাম”  শব্দদ্ব আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি য়াসাল্লাম ও অন্যান্য আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণের সাথে নির্দিষ্ট-নির্ধারিত ছিল। “আজ্জা ও জাল্লা”জাল্লা শানুহু” জাতীয় শব্দাবলি যেমন আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্যদের সাথে

ব্যবহার হয় না;  তেমনি “সালাত ও সালাম” শব্দ দুটিও আম্বিয়া ও ফেরেশতাগণের জন্য ব্যবহার হবে। অন্যদের জন্য মাগফেরাত ও রেজার (সন্তুষ্টির) দোয়া করা হবে। যেমন

  يغفر الله له    - رضی الله عنه

নবী ব্যতীত অন্যদের ক্ষেত্রে সরাসরি “সালাত-সালাম” শব্দের ব্যবহার রাফেজীরা শুরু করেছে। তারা তাদের কোনো কোনো ইমামের জন্য এ শব্দ ব্যবহার শুরু করে। যেহেতু বিদতীদের সাথে সামঞ্জস্য নাজায়েজ তাই আম্বিয়া ব্যতীত কোনো ব্যক্তির সাথে সালাত ও সালাম শব্দের ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ. সম্বন্ধে প্রমাণিত আছে, তিনি এ মর্মে রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করেছিলেন যে,  সালাত” শব্দের ব্যবহার শুধু আম্বিয়ায়ে কেরামের জন্য নির্ধারিত থাকবে। অন্য মুসলমানদের জন্য কেবল দোয়া করা হবে।ফরমানটিতে লেখা ছিল:-

وَجَاءَ عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ بِسَنَدٍ حَسَنٍ أَوْ صَحِيحٍ أَنَّهُ كَتَبَ لِعَامِلِهِ : أَنَّ نَاسًا مِنَ القُصَّاصِ قَدْ أَحْدَثُوا فِي الصَّلَاةِ عَلَى حُلَفَاءهِمْ وَمَوَالِيهِمْ عِدْلَ صَلَاتِهِمْ عَلَى النَّبِي فَإِذَا جَاءَكَ كِتَابِي هَذَا فَمُرْهُم أَنْ تَكُونَ صَلَاتُهُمْ عَلَى النَّبِيِّينَ خَاصَّةً وَدُعَاءُهُمْ لِلْمُسْلِمِينَ عَامَّةً .

হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ.-এর রাষ্ট্রীয় ফরমানটির অনুবাদ:-

“তিনি তার গভর্নরদের উদ্দেশ্যে লিখিত পাঠিয়েছিলেন, গল্পকার ও কিচ্ছা-কাহিনি বর্ণনাকারী লোকেদের অনেকে নিজেদের মিত্র আজাদকারী মনিবদের ক্ষেত্রে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লামের মতো : ‘সালাত’ শব্দের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। আমার এই পত্র আপনার নিকট পৌঁছার পর তাদেরকে আদেশ করবেন, তারা যেন সালাত’ শব্দের মাধ্যমে কৃত দোয়া নির্দিষ্টভাবে শুধু নবীদের ক্ষেত্রেই করে আর সাধারণ মুসলমানদের জন্য অন্য স্বাভাবিক দোয়া করে।”

হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো জন্য সালাত প্রেরণ করা উচি নয়। তাঁর থেকেই অন্য বর্ণনায় আছে- আমার জানামতে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কারো জন্য সালাত প্রেরণ করা উচি নয়। মুসলমান পুরুষ-  মহিলা সকলের জন্য ইস্তেগফার করা-ক্ষমা প্রার্থনা করা উচি। হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত এসব রেওয়ায়েত দ্বারা আম্বিয়াগব্যতীত অন্যদের জন্য সালাত শব্দের ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই মাকরূহ সাব্যস্ত হয়; এমনকি হারাম সাব্যস্ত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন