বরকতহীনতা-মুখাপেক্ষিতার কারণ
দুনিয়ার এ জীবনে মানবীয় প্রয়োজন (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান) থেকে আমরা কেউই
মুক্ত নই। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। রব্বুল আলামীন এ প্রয়োজনের পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত
আয়োজন করেই প্রতিটি ইনসানকে ইহজগতে পাঠিয়েছেন। এ চূড়ান্ত এমনই চূড়ান্ত যে, এক দানা
কম-বেশি হওয়ারও সামান্যতম সম্ভাবনা নেই, নেই, নেই। কারো বেলায়ই নেই। অবশ্য খাজা
আবদুল কাদির জিলানী রহ.-এর বয়ানের সংকলন “আলফাতহুর রব্বানী”তে দেখেছি- ‘রিজিকের এ
চূড়ান্ত পরিমাণের চেয়েও কম ভোগ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারার মতো সৌভাগ্যবান
খুবই কম হয়ে থাকে’। দীর্ঘদিন কথাটার কিছুই বুঝে আসে নাই। অতঃপর একদিন হজরত জুনাইদ বাগদাদী (গালেবান, অথবা এ
মাপের কেউ হবেন) রহ.-এর বাণী হিসেবে একজায়গায় পেলাম- ‘বান্দাকে দুনিয়াতে যা রিজিক দেওয়া হয় তা
আখেরাতের রিজিক থেকে কমে যায়। দুনিয়াতে দেওয়া না হলে তা আখেরাতের জন্য রয়ে যায়।’
হজরতের এ বক্তব্য পাওয়ার পর খাজা আবদুল কাদির জিলানী রহ.-এর বক্তব্য পরিষ্কার হয়ে যায়।
ভাবতে ভাবতে এ কথাও মনে উঁকি দেয়- নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি
ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা যে প্রস্তাব করেছিলেন, বন্ধু আপনি চাইলে মক্কার
পাহাড়গুলি আপনার জন্য স্বর্ণে পরিণত করে দেওয়া হবে। উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লাম একদিনের আহার ও শোকর এবং পরদিনের অনাহার ও সবর যে চেয়ে
নিয়েছিলেন; সে রহস্য বুঝি এখানেই নিহিত। মক্কার পাহারগুলো স্বর্ণে পরিণত করে সেগুলোর
মালিক বানিয়ে দেওয়া এটা আকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়াবী
রিজিকেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল। ‘প্রলাপ প্রলম্বিত হইয়া গেল’। বলছিলাম, রব্বুল
আলামীন এ প্রয়োজনের পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত আয়োজন করেই প্রতিটি ইনসানকে ইহজগতে
পাঠিয়েছেন। তবে মানুষের আমলের কারণে এ চূড়ান্ত আয়োজন প্রয়োজনের সময় সে পাওয়া বা না
পাওয়া, দুশ্চিন্তামুক্ত পাওয়া বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পাওয়া, ইজ্জতের সাথে পাওয়া বা
বেইজ্জতির পর পাওয়া- আমলের কারণে এসব পরিবর্তিত হয়ে থাকে। অভিজ্ঞজনের অভিজ্ঞতার আলোকে
নিচে সময়মতো না পাওয়া, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পাওয়া, বেইজ্জতির পর পাওয়া- এককথায় রিজিকে
বরকতহীনতার সাতটি ও বরকত লাভের সাতটি কারণ উল্লেখ করা হলো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমলের
তাওফিক দান করুন। আমিন।
১। নামাজে তাড়াহুড়া করা। ধীর চিত্তে খুশু-খুজুর সাথে নামাজ আদায় না করা।
২। দাঁড়িয়ে পেশাব করা।
৩। মুখে ফুঁ দিয়ে মোমবাতি ইত্যাদির আগুন নিভানো।
৪। দাঁড়িয়ে পানি পান করা।
৫। পেশাবের স্থানে/ নাপাক জায়গায় অজু করা।
৬। দাঁত দিয়ে নখ কাটা।
৭।গায়ে পরিহিত জামা-লুঙ্গি দিয়ে মুখ মোছা।
বরকত লাভের সাত কারণ
১। কুরআনুল কারীমের তেলোওয়াত করা।
২। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্দি করা। পুরুষরা জামাত-তাকবিরে উলার সাথে ও মহিলাগণ আউয়াল ওয়াক্তে আদায় করা।
৩। বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়
করা।
৪। গরীব-অসহায়দের সাহায্য করা।
৫। গুনাহ থেকে তাওবা করা।
৬। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা। আত্মীয়দের হক আদায়ের
প্রতি যত্নবান হওয়া।
৭। সকালে সুরায়ে ইয়াসিন ও সন্ধ্যায় সূরায়ে ওয়াকিয়াহ
তেলোওয়াত করা।
[“দউলতে বে-যাওয়াল”
নামক কিতাব থেকে সংগৃহিত]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন