পোস্টগুলি

মার্চ, ২০১৯ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

আরবি ভাষা : ভূত বর্তমান

বাকশক্তি কি কণ্ঠনালী, জিহ্বা, চোয়াল, তালু, দাঁত, ঠোঁট ও নাক এ সপ্তাঙ্গের সাধিত ক্রিয়া? ব্যাকরণ তো তাই বলে! তাহলে নিশ্চয়ই মানবদেহের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী এ অঙ্গসমূহের অধিকারী প্রাণীকুলের বাকশক্তি তো বহুগুণ শক্তিশালী হওয়ার কথা? ভাবলে- মহান আল্লাহ তা‘আলার অসীম কুদরত ও অপার করুণা নতুনকরে শুকরিয়া আদায়ে উদ্ভুদ্ধ করে তোলে। পৃথিবীর সকল প্রান্ত, সর্ব যুগ, সব মানুষের প্রত্যঙ্গসমূহের কার্যাবলি একই হলেও বাকপ্রত্যঙ্গের কার্য-কথা বহু রকম; সুবহানাল্লাহ। জাতি সংঘের হিসাব মতে- পৃথিবীতে ৭ হাজারের অধিক ভাষা রয়েছে। ভাষাভাষী জনসংখ্যার বিচারে প্রথমে রয়েছে চীনের ম্যান্ডারিন ভাষা (১ বিলিয়ন)। অন্যভাষী মানুষের জন্য শিখতে সহজ-কাঠিন্যতার বিচারেও সবচেয়ে কঠিন ভাষা এই ম্যান্ডারিন। জনসংখ্যার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে পরবর্তী ৯টি ভাষা- ইংরেজি (৫০৮ মিলিয়ন), হিন্দুস্তানী (৪৯৭ মিলিয়ন), স্পেনিশ (৩৯২ মিলিয়ন), রাশিয়ান (২৭৭ মিলিয়ন), আরবি (২৪৭ মিলিয়ন), বাংলা (২১১ মিলিয়ন), পর্তুগীজ (১৯১ মিলিয়ন), মালেয়ান-ইন্দোনেশিয়ান (১৫৯ মিলিয়ন), ফ্রেন্স (১২৯ মিলিয়ন)।  ২৪৭ মিলিয়ন বনি আদমের মুখের ভাষা হিসেবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার পূর্বে ...

যৌক্তিক কারণে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত

“তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করিয়াছেন এবং উহার মনযিল নির্দিষ্ট করিয়াছেন যাহাতে তোমরা বৎসর গণনা ও সময়ের হিসাব জানিতে পার।” {সুরা ইউনুস : আয়াত ০৫} নিজেদের কার্যসূচি তৈরি ও সময়ের হিসাব রাখার স্বার্থে আদিকাল থেকেই বিশেষ কোন ঘটনা ইত্যাদিকে একক ধরে সময় গণনা করা হত। প্রাপ্ত ইতিহাস মতে, প্রথমে চাঁদের হিসাবে বর্ষ গণনা-পঞ্জিকা-ক্যালেন্ডারের আবিষ্কার হয়। চন্দ্রবর্ষে ঋতু-নির্ধারণ-সমস্যা হেতু কালক্রমে আবিষ্কার হয় সৌরবর্ষ। ইতিহাসের একাধিক সূত্র মিলালে সিদ্ধান্ত নিতে হয়- সৌরবর্ষ আবিষ্কারের মূল গৌরব সুমেরীয় সভ্যতার হলেও; জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিসাবনিকাশে এগিয়ে ছিল মিশর। মিশরীয় সভ্যতাই ৪২৩৬ অব্দ তথা ৬২৫৩ বৎসর পূর্বে পূর্ণাঙ্গ সৌর ক্যালেন্ডারের ব্যবহার শুরু করে। বিভিন্ন সময়ে সমকালীন সম্রাটদের অবদানে আজকের আধুনিক সৌর ক্যালেন্ডার আমাদের জীবনের গতির সাথে মিশে রয়েছে। তাদের মধ্যে সম্রাট রমুলাস (৭৩৮অব্দ), সম্রাট নুমা (৪৩২অব্দ), সম্রাট জুলিয়াস সিজার (৪৬অব্দ), সম্রাট অগাস্টাস -এদের দু’জনের নামেই যথাক্রমে কুইন্টিলিস মাস জুলাইয়ে আর সেক্সটিনিস মাস আগস্ট বা অগাস্ট-এ রূপান্তরিত হয়- সবিশেষ উল্...

তিনি এ যুগেরই মানুষ

সদা হাসিমুখে আগে সালাম দিয়ে কুশল জিজ্ঞাসাকারী যে লোকটি গত ১১ জুলাই ২০১৬ সোমবার শাওয়ালের রোজা অবস্থায় কাকরাইলের গেইটে মাওলার ডাকে সাড়া দিলেন তিনি হজরতজী মাওলানা এন‘আমুল হাসান রহ.-এর পক্ষ থেকে হজরত মাওলানা সাঈদ খান সাহেব রহ.কে হাদিয়া দেওয়া “খাস চিজ”, উভয় হজরতের দীর্ঘ দিনের খাদেম, শাইখুল হাদিস মাওলানা যাকারিয়্যা রহ.কে কবরে রাখনেওয়ালা, কারী তৈয়ব সাহেব রহ.-এর “সফিরে খাস”, ১০বছর মদিনা মুনাওয়ারায় মসজিদে নূর-এর মুকিম (যা মদিনার তাবলিগের মারকাজ হিসেবে ব্যবহৃত), অতঃপর আমৃত্যু মুকিম কাকরাইল মসজিদ, ২৮০০ ফুট উপর থেকে নিক্ষেপিত বেঁচে যাওয়া সাদাসিদা মানুষ মাওলানা ওজিউল্লাহ বিন আমজাদ আলী।  লেখা-পড়া শুরু হয় ফেনী, শর্শদী মাদরাসায়।মিজান ও নাহবেমীর পড়েন কুমিল্লা নূর মসজিদ মারকাজ মাদরাসায়। হেদায়েতুন্নাহু থেকে দাওরা (৭বৎসর) সমাপ্ত করেন দিল্লি নিজামুদ্দীন মারকাজ মাদরাসায়। পরের বছর এক সালের তাশকিল হয়ে যান। সালের তিন মাস বাকি থাকতে তৎকালীন বৃহত্তর নোয়াখালীর আমির হাজী সেকান্দার সাহেবের ছোট কন্যারসাথে ৩৫০০ (তিন হাজার পাঁচশত) টাকা মোহরে টংগী ইজতেমায় হজরতজী মাওলানা এন‘আমুল হাসান রহ.-এর হাতে বিবাহ বন্ধনে আব...

মুহতারাম মুফতি সাহেব!

এ কটি ইফতা বিভাগের পুনর্মিলনী উপলক্ষে পাঠের জন্য রচিত) মুহতারাম মুফতি সাহেব! দীর্ঘ দিন বিদেশ-বিভুই কাটানো ছেলেকে বুকে ফিরে পাওয়া বাবার বুকটা যেমন আনন্দে ভরে উঠে, নিজেকে ভুলে গিয়ে হয়ে যায় আত্মহারা; তেমনি আবনায়ে দারুল ইসলামকে বুকে পেয়ে জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম আজ আনন্দিত, আন্দোলিত, উদ্বেলিত। সময়ের সীমাবদ্ধতা না থাকলে আবনায়ে কদিমকে কাছে পাওয়ায় হর্ষ স্রোতের ব্যাখ্যার বৃথা চেষ্টা করতাম আরো কিছু সময়। হিজরি পনের শতাব্দীর উম্মতের অতন্দ্র প্রহরী আপনারাই। যখন ভাবি, বিগত পাঁচ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই আবনায়ে দারুল ইসলাম উম্মতের দীনি চাহিদা পূরণে নিজেদের সর্বোচ্চ কুরবানি পেশ করে যাচ্ছে; আনন্দে মনটা ভরে উঠে, শুকরিয়ায় দরবারে ইলাহিতে মাথাটা নিচু হয়ে আসে। ওহে আফলাজু কাবিদিনা! কর্মক্ষেত্রে সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞ আসাতিজায়ে কেরামের কাছ থেকে নতুন নতুন দিকনির্দেশনা গ্রহণ করবেন। উম্মতের প্রয়োজনে নব উদ্যমে, আরো অধিক আত্মত্যাগ-কুরবানির দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করবেন- তবেই স্বার্থক হবে এই পুনর্মিলনী জলসা। বিজ্ঞ-বিচক্ষণ-দক্ষ আসাতিজায়ে কেরামের বক্তব্য মিছিলের শেষ প্রান্ত থেকে আমি অ...

প্রেমের মরা জলে ডুবে না

শিরোনামটি কৈশরে শোনা একটি বাক্য। একটি চলচ্চিত্রের নাম। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় টিভি-সিনেমার সাথে সম্পর্ক ছিল না। বাক্যটি প্রাইমারী বন্ধুদের মুখে শুনে শুনে স্মৃতিপটে আটকে যাওয়া। তখনকার বয়সে ‘প্রেম’ শব্দটা নিজের মতো করে বুঝলেও; -মনে পড়লে এখন হাসি পায়- প্রকৃত অর্থে বুঝতাম না কিছুই। চলচ্চিত্রের কাহিনি কী ছিল, কেন এ নামকরণ আমার জানা ছিল না, আজও জানা নেই। অন্য দশটা কিশোরের মতো ‘প্রেম’ শব্দটা নিয়ে একটা অজানা আগ্রহ নিজে নিজে একটা কাহিনি আবিষ্কার করেছিল। সংক্ষেপে, এক প্রেমিক, এক প্রেমিকা। দীর্ঘ দিন প্রেমের পর নায়কের শত্রু পক্ষ প্রেমিকাকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে। মৃত্যুর পরও নায়িকার মরদেহটি পানিতে ভেসে রয়েছে, ডুবছে না। যেহেতু প্রেমের কারণে তার এই মৃত্যু। সুতরাং এই হল- প্রেমের মরা জলে ডুবে না। এমন সোজাসাপ্টা হিসাবে পাঠক হয়ত হাসছেন। একটু অতীতে ফিরে যান। আপনি ক্লাস থ্রি-ফোরের ছাত্র, বয়স আট-নয়। বন্ধুদের কাছে শুনলেন একটা সিনেমার নাম হল ‘প্রেমের মরা জলে ডুবে না’। আপনার কল্পিত কাহিনিটা নিশ্চয় আমার কাহিনির চেয়ে অতি ভিন্ন কিছু নয়। আবার হতেও পারে। একটু বড় হয়ে যখন বুঝলাম, মৃত্যুর কারণ যাই ...

বেহুদা বাত

( মুফতি ওবাইদুল হক দা.বা.-এর একটি বইয়ের ভূমিকা হিসেবে লেখা) লোকটার কেরাতে আমার মতো পাপী মোকতাদীর চোখেও যদি পানি আসে; অন্যরা তাকে মেজাজী, ব্যবসায়ী, দুনিয়াদার যাই বলুক:  আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, কেরাত প্রণেতা মাওলায়ে পাকের সাথে তাঁর প্রাইভেট একটা রিলেশান আছে। তাই কাছে যাই। একটু সময় করে বসি। কথা শুনি। তিনি যা বলেন, তাই শুনি। একদিন বললেন, ছয় বছর আগে আমি একটা বই লিখেছিলাম। “আল জামেয়া”তে কয়েক কিস্তি ছাপাও হয়েছিল। হঠাৎ ছাপা বন্ধ হয়ে গেল। সম্পাদক, সহসম্পাদক জানালেন, পাণ্ডুলিপির মাঝ থেকে সত্তর পৃষ্ঠা গাইব। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা পাচ্ছেন না। যতটুকু আছে দেখতে চাইলে- খুব আগ্রহ নিয়ে দেখালেন। ভাষা-সাহিত্য শিক্ষকতার সাথে জড়িত বলে, একজন লেখকের এই “আগ্রহ-পুলক”-এর সাথে আমি পূর্ব পরিচিত। মনে মনে ভাবলাম ...। হুজুর জানালেন, কম্পোজ করিয়ে আল জামেয়াকে হার্ড ও সফট কপি দিয়েছিলেন। রহস্যজনকভাবে দুটোই একত্রে হারিয়েছে। মূল হাতের লেখাটা আছে। অল্প কিছু পাতা অবশ্য নেই। সব একত্র করে, হাতের লেখাও না থাকা অংশগুলো নতুন করে লিখে বই করার আবেদন জানালাম। : আমার লেখা তো ছাপার উপযুক্ত না। : উপযুক্ত, কম্পোজ, ছাপা আমি...

সনদ নয় পাগড়ি

দারুল উলুম দেওবন্দ ও ঐতিহাসিক ইলহামী এ প্রতিষ্ঠানটির সাথে সম্পৃক্ত ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা এ ধারার প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষা সমাপনীতে “সম্মাননা পাগড়ি” প্রদান করে থাকে। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পূর্বকালেও শিক্ষার কোন একটি কোর্স বা মেয়াদ শেষে সার্টিফিকেট-সনদ প্রদানের রীতি চালু ছিল। যৌক্তিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে; সনদ-সার্টিফিকেটের পরিবর্তে পাগড়ি প্রদানের রীতি কেন চালু করা হল? দারুল উলুম দেওবন্দ প্রচলিত রীতির পরিবর্তে একটি নতুন নীতির প্রচলন ঘটানোর যৌক্তিকতা এবং আজকের দিনেও তা ধরে রাখার স্বার্থকতা কী এবং কতটুকু? দারুল উলুম দেওবন্দ তথা কওমী মাদরাসাসমূহ দীক্ষা নির্ভর প্রতিষ্ঠান। এরা শিক্ষার চেয়ে দীক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ কারণেই এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানত আবাসিক। প্রতিটি তালিবুল ইলমকে হিংসা, বিদ্বেষ, গিবত, ক্রোধ, লোভ, অহংকার, লৌকিকতা, পরশ্রীকাতরতা, চোঘলখোরী ইত্যাদি আত্মিক কলুষ থেকে মুক্ত করে একেকজন অনন্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নববী আদর্শ-সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপনে অভ্যস্ত-জীবন গঠনে প্রলুব্ধ করে তোলা হয়। এ মহান উদ্দেশ্য সাধনে চব্বিশ ঘণ্টার ...

তামরিনুল ফারায়েজ কিতাবের সম্পাদকীয়

দুনিয়ার এই পরীক্ষাগারে সবচে’ বড় প্রশ্ন انما اموالكم ... فتنة। প্রশ্নকর্তাই উত্তর শিখিয়েছেন, ما من دابة فى الارض الا على الله رزقها। সর্বজনব্যাপী প্রশ্নের এ শাশ্বত উত্তর অনুধাবন করতে পারলে ওরাসাত-মিরাস-ধন-সম্পদ মূল্যহীন তুচ্ছ বস্তু মাত্র। অন্যথায় এ তুচ্ছ বস্তুটিই সহস্র নৈরাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। ইমতেহানগাহ হেতু অনুধাবনকারীদেরও অগ্রাহ্য করার জো নেই; ওরাসাত-মিরাস-ধন-সম্পদের বাহানার ভেতরে থেকেই কাটাতে হবে পার্থিব জীবন। ان الانسان لفى خسر নৈরাজ্য বন্ধের ‘পন্থা’ তিনিই বাতলে দিয়েছেন يو صى كم الله فى اولادكم। এগার শ’ বছর ধরে ‘পন্থা’ অবলম্বনের বড় সহায়ক السيراجى فى الميراث। এই অবলম্বনকে অতি সহজে ফলপ্রসূ করার মহৎ উদ্যোগ “তামরিনুল ফরায়েজ”। বন্ধুবর সংকলকের অধ্যবসায় আমাকে মুগ্ধ করেছে। “মাসআলা বুঝে এসে গেছে’র” ধোঁকায় না পড়ে তামরিন পূর্ণ করলেই পাওয়া যাবে সুফল। নতুবা মনে হতে পারে- মাতৃভাষায় নববী ইলম সংকলনের তালিকায় এ এক অপ্রয়োজনীয় সংযোজন। ان الله لا يضيع اجر المحسنين। বিনীত হানিফ আল হাদী

মেরাজনগরের স্মরণিকার সম্পাদকীয় ১৪৩৭-৩৮

কায়েদা শ্লেট বুকে একটি শিশু মাদরাসায় আসে সাত থেকে দশ বছর বয়সে। দাওরায়ে হাদিস শেষ করে মাওলানা সাহেব হিসেবে বিদায় গ্রহণকালে সেই শিশুটি বিশ-বাইশ বছরের নওজোয়ান। যারা কুরআনুল কারিম হেফজ করে তাদের কেটে যায় আরো তিন-চার বছর। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় বাবা-মা, ভাই-বোন থেকে দূরে কোন প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে সেখান থেকে বিদায় নেওয়া, পিতৃতুল্য গুরুজনদের থেকে পৃথক হওয়া  -যারা নিজেরাও পরিবার পরিজন ছেড়ে এদের বুকে নিয়েই কাটিয়ে দেন জীবন- এ বিসর্জন, এ পৃথকতার প্রকৃত বাস্তবতা তুলে ধরার মতো শব্দ না থাকা ভাষার দৈন্যতা হতে পারে না। পরম দয়ালু পিতৃতুল্য আসাতিযায়ে কেরাম ও মাতৃক্রোড়ের ন্যায় সস্নেহে লালনকারী জামিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের এই বিরহকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মরণিকার প্রকাশ। সে সূত্রেই আমাদের ১৪৩৭-৩৮ হিজরি শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের উদ্যোগে এ স্মরণিকা। স্মরণিকা মূলত সাময়িকীর একটি প্রকার। সুতরাং সমসাময়িক যে কোন বিষয়ই হতে পারে স্মরণিকার বিষয়বস্তু। বলার প্রয়োজন নেই, ইসলামের প্রতিটি বিধানই চির সমসাময়িক। সে বিবেচনায় কুরআন-হাদিসের আলোকে লিখিত যে কোন বিষয়ই স্মরণিকায় স্থান পাওয়ার যৌক্তিকতা রাখে। তথাস্তু দারুল উলূম মেরা...

কাকরাইলের মুরব্বি মুবাল্লেগ আলেমে দ্বীন মাওলানা ওজিউল্লাহ রহ.

আজ পাঁচ শাওয়াল ১৪৩৮। স্মৃতির ডায়েরিটা উল্টে এক বছর পিছনে গেলাম। ১৪৩৭ হিজরির এই দিনে (সোমবার, ১১ জুলাই ২০১৬) একটি শহিদি মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছিল কাকরাইল মসজিদের সামনের ফুটপথটি। পুলিশ রিকোজিশনের ব্রেকফেল-করা বাসের ধাক্কায় দিদারে এলাহী লাভ করেছিলেন মাওলানা ওজিউল্লাহ বিন আমজাদ আলী নামের এ যুগের অবাককরা দুনিয়াবিমুখ এক মুবাল্লেগ আলেম। যার জীবনের পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষণীয় ঘটনার সমাহার। দুনিয়ায় বেঁচে থাকার উপায়-উপকরণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সারা জীবনে কোন পেশা গ্রহণ করেন নাই, এমন আরেকটি নাম না শুনেই তো দাড়িতে পাক ধরল! জানি না, বাকি হায়াতে শুনব কি-না? কুমিল্লা নূর মসজিদ মারকাজ মাদরাসায় মিজান জামাতে দাখেলা নিয়ে তা‘লিমের পাশাপাশি দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যে সম্পৃক্ততা শুরু হয়; জীবনের শেষ অবধি তা শুধু চক্রবৃদ্ধি হারের ন্যায় বৃদ্ধিই পেয়েছে, এতটুকুও কমেনি। মেহনতের দরিয়ায় কভু ভাটা পড়েনি। ৪৫-৪৬ বছর (নূর মসজিদ-এ দাখেলা পাওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত) শুধু জোয়ারের পানি যেমন ফুলে, তেমনি ফুলেছে হজরত মাওলানার “খাদেমী-তাবলিগী” জীবন। হজরতজী মাওলানা এন‘আমুল হাসান ও হজরত মাওলানা সাঈদ খান সাহেব রহ.-এর খেদমত...

জামি‘আতুল আশরাফ ঢাকা-এর পরিচিতি হিসেবে লেখা

নভোমণ্ডল- ভূমণ্ডল, আকাশ-মাটি, সৌরজগৎ-মহাশূন্য কিছুই যখন ছিল না; তিনি ছিলেন। যেমন আছেন। যেমন থাকবেন। একদা কুদরতের দরিয়ায় একটা ঢেউ ওঠল। অসীম সৃষ্টি ক্ষমতা প্রকাশ অপেক্ষায় দোল খেল। ‘কুন’-এর মালিক বললেন, ‘কুন’; মহাশূন্য-মহাকাশ-নভো-ভূমণ্ডল ‘ফাইয়াকুন’। বললেন, হও; হয়ে গেল সব। ঘোষণা করলেন, আমি জমিনে আমার খলিফা পাঠাব। ফেরেশতারা বলল, প্রভু হে! কী দরকার ওদের? ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে। তোমার ইবাদত আমরাই তো করছি। বললেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জান না’। তিনি কী জানেন? তিনিই জানেন। আমরা জানি না। শুধু জানি, ইবাদত-মা‘রিফাত, দাসত্ব-পরিচয় লাভ; এ জন্যই মোদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা দুর্বল। আছে নফস-শয়তান। প্রবঞ্চনা-ধোঁকা দেয়, বিপথগামী করে। নিয়ে যায় ভ্রান্ত পথে। সতর্ক করতে পাঠালেন নবী-রসুল। পূর্ণ সমর্পিত, সর্বান্ত অনুগত মহামানবগণ দায়িত্ব আদায় করলেন পুঙ্খানুপুঙ্খ। প্রথম মানুষই প্রথম নবী। প্রথম দিশারী। রিসালাতের প্রথম ইট। নবী চলে যান, অনুসারীরা ছেড়ে দেয় অনুসরণ। আবার নবী আসেন, আঁধার কাটে। আগমন-প্রস্থানের ধারাবাহিকতায় ছাদ হয়ে এলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ‘আনা খাতামুন নাবীয়্যিন লা নাবীয়্যা বা‘দি’...

বাস্তব আছে বলেই কল্পনা

পুরানা পল্টন মোড়। বিকাল বেলা। ট্রাফিক জ্যামে বাসে আটক। পাশের প্রাইভেটকারটায় সচিবালয়ের স্টিকার লাগানো। ভিতরে বসা ভদ্র মহিলা ১৬ কোটি মানুষের কল্যাণ-চিন্তা কেন্দ্রের কর্মকর্তা। কোন মন্ত্রণালয়ের সচিব বা উপসচিব হবেন হয়ত। হাতে ১২-১৪ ইঞ্চি ট্যাব/আইপ্যাড। ইটের পর ইট গাঁথুনি হয়ে যাচ্ছে আর তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ভেঙ্গে চলেছেন। সিগ্ন্যাল বাতি পরিবর্তন হল। চলতি রোড দুটি থেমে আটক গাড়িগুলোর চাকা সচল হল। প্রাইভেটকারটা চলে গেল দৃষ্টি সীমার বাইরে। দৃশ্যটা শুধু আটকে থাকল চোখে। বিঁধে থাকল অন্তরে। পাশের সিটে বসা যুবকও ব্যস্ত। শুনার জন্য খোদাপ্রদত্ত কান দুটোতে ছোট্ট দুটো শ্রবণযন্ত্র ঢোকানোই আছে। ওসব সরিয়ে পাশের যাত্রীর কথা শুনবে: সময় কই? কেউ কিছু বলতে চাইছে দেখার ফুরসত নেই। পাঁচ ইঞ্চি রঙ্গিন দুনিয়াটায় দেখার কত্ত কিছু! ওসব ফেলে বাস্তবনামক এই পানসে জগতটায় তাকানোর কী আছে? আমার নানা সদালাপী মানুষ ছিলেন। বাস-ট্রেনে পরিচিতিতে সখ্য গড়ে উঠা বহু মেহমান আসত তার বাসায়। আজকের দিনে তিনি বেঁচে থাকলে ...? নেট-ইন্টারনেট, ফেইসবুক-টুইটারে নিমজ্জিতসমাজ ভ্রূ কুচকে তাকাবেন- স্বাভাবিক। পাক্ষিক দেশ দর্শনের চিন্তাশীল পাঠকসমাজ ...

ঘুরে এলাম চিড়িয়াখানা

১৬ মার্চ ২০১১। বুধবার। মা! আমরা আজ চিড়িয়াখানায় গিয়েছি। তুমি, তোমার মা, আমি। সাথে আছেন তোমার মোস্তফা চাচ্চু, চাচী, রাইসা আপু। চিড়িয়াখানা শব্দটি দুটি শব্দের সন্ধিতে তৈরি। উর্দু ভাষায় ছোট পাখিকে বলে ‘চিড়িয়া’ আর খাঁচা/ঘর বোঝাতে উর্দুতে ব্যবহার হয় ‘খানা’। সে মতে চিড়িয়াখানা অর্থ ছোট পাখির খাঁচা। তবে এখন আর সন্ধিপূর্ব এ অর্থ আমরা বোঝাই না। বর্তমান ব্যবহারে চিড়িয়াখানার অর্থ পশু-পক্ষিশালা। সংজ্ঞায়িত করতে চাইলে বলা যায়- পশু, পাখি, সরীসৃপ প্রভৃতির দর্শনীয়ভাবে সংরক্ষণের স্থানকে বলে চিড়িয়াখানা। তুমি তোমার চাচ্চুর কোলে গেলা। তোমাকে এই প্রথম দেখলেন। ‘আওয়াজ বাণিজ্যের ব্যস্ততায় তিনি কাতারে থাকেন। তোমাকে দেখার জন্য আমার কাছে ছবি চেয়েছেন বারবার। কিন্তু মা ছবি তোলা একটি গুনাহের কাজ। আজ পর্যন্ত আমরা তোমার কোন ছবি তুলি নাই। তোমার আব্বু আম্মুও ছবি তোলে না। জরুরি প্রয়োজনে অর্ধছবি ছাড়া জীবনে কোন ছবি তুলবে না। প্রিন্ট হোক বা না হোক, চাই সেটা মোবাইল ক্যামেরা হোক- তুলবে না, এটাই কথা। আয় আল্লাহ, সেই প্রয়োজনটা যেন হয় আমাদের বাইতুল্লাহর সফর। বানরদের বাদাম খাইয়ে এগিয়ে গেলাম হরিণের খাঁচার দিকে। অনেক বড় খাঁচা। সে...

তাঁর মৃত্যু : আমার মিনতি

এম্বুল্যান্স চলছে। আব্বা মুহ্যমান। চোখে পানি। গলায় কথা সরে না। রেজার দিকে তাকালাম। ও কাঁদছে খুব বেশি। অতীতের জানালায় ভেসে উঠল মাদানীনগরের পরিচয় পর্বটা। কীভাবে মাদানীনগর এলা? উত্তরটা রেজা মুখে দিতে পারেনি, কাগজে দিয়েছিল। আম্মার স্ট্রোক-স্ট্রোক পরবর্তী দিনগুলো পড়ে- অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন। নতুন পরিচিত একটা ছেলের মায়ের  জন্য কেন এত কাঁদছি? উত্তর জানা ছিল না। না আমার! না তাঁর ছেলের! না কোন মানুষের! উত্তরহীন ঐ কান্না দেখে হয়ত হেসেছিল আসমান? হায়রে অজ্ঞ মানব! তুমি তাঁর জন্য আবার কাঁদবে এম্বুল্যান্সে বসে। সেদিন স্ট্রেচারে ঘুমাবেন শাশুড়ি। পাশের সিটে বসা জামাই খুঁজে পাবে “অজানা-জানা” কান্নার মিল সাত বছর পর।  আব্বা বারবার পেছনে তাকাচ্ছেন। রাসেল ভাই হৃদয়-স্পন্দন বুঝার চেষ্টা করছেন। হায়দার ভাই মৃদুস্বরে মোবাইলে সংবাদ জানাচ্ছেন। নিঃশব্দে পানি ঝরাচ্ছে দশটি চোখ। দুটি চোখ নিমীলিত। আম্মার অসুস্থতায় আব্বা কোনদিন বিরক্তি প্রকাশ করেননি। চিকিৎসায় অবহেলা করেননি। শরীর ও সাধ্যের সবটুকু চেষ্টা, হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসামিশ্রিত সজাগ-সচেতনতাসহ চিকিৎসা চালিয়েছেন। সুস্থতা-শান্তির জন্য এতটা চেষ্টা-সতর্কতা ...

মোবারক হো... ২০১৬

বিদায় ২০১৫। মোবারক হো ২০১৬। চাঁদ-সুরুজের উদয়-অস্তের মধ্য দিয়ে কেটে গেল একটি বছর। উদয়-অস্ত থাকবে ঠিকই। ঈসায়ী ক্যালেন্ডারে ২০১৫ সাল থাকবে না। আর কোন দিন আসবেও না। তাইতো তাবৎ দুনিয়ার মানুষ অতীতের সব গ্লানি, যাতনা, হারানো, না পাওয়া: সব রকমের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুন বছরে সুন্দর সুখের সম্প্রীতির জীবন শুরু করতে চায়। আমিও চাই। আমরাও চাই। “দেশ দর্শন” তার সম্মানিত লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী সকলের জন্য সে কামনাই করে। আমি আরো চাই- আমাদের এই ভাল থাকার-ভাল রাখার প্রার্থনা-প্রচেষ্টা যেন কোন দিন তারিখের সাথে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের প্রার্থনা-প্রচেষ্টায় সারা বছর জুড়ে দিনমানভরি যেন মঙ্গল কামনা থাকে বিশ্ব মানবতার তরে। এক বছর পূর্বে ২০১৫’র প্রারম্ভেও আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিলাম। শুভ কামনা করেছিলাম। আমাদের এই দেশ, দেশের প্রতিটি নাগরিক তথা আমার মা মাটি মানুষের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করেছিলাম। কিন্তু তার কতটুকু পেয়েছি আমরা? হয়ত যতটুকু পেয়েছি- এই প্রার্থনা, এই কামনা না করলে এরচেয়ে খারাপ যেত আমাদের সময়। অথবা এমনই কাটত যেমন কেটেছে। তবে ঐ শাশ্বত বাণী ভুলে গেলে চলবে না- ‘মানুষের কৃত কর...

বোন নুহা! আপনাকে বলছি...

দুইটা বাচ্চার জ্বালায় অতিষ্ঠ নুহা। ৫ ও ২ বছরের দুটো সন্তানের অত্যাচারে নুহা কেন, যে কোন মায়েরই বিরক্ত হবার কথা। সংসারের টানাপোড়ন যেন কয়লায় ফুঁক দেয়। স্বামী বাইরে থাকার দীর্ঘ সময়টা একাকী বিষিয়ে ওঠে। ভাবে, একজন সাহায্যকারিণী থাকলে বোধহয় এতটা অধৈর্য হত না। কিন্তু সাধ আর সাধ্য তো এক মেরুতে চলে না। সহ্য সীমা ছাড়িয়ে গেলে হাত পিঠে যায়। হাতে পাখা-চামচ ইত্যাদি কিছু থাকলে তা-ই। শিশু দু’টো কাঁদে। ভীতি মানুষকে দৌড়ে বেড়ায়। শিশুদেরও। সবটুকু শক্তি দিয়ে দেয় দৌড়। বিছানার ওপারে। শিশু মন কী যেন ভাবে? ফোঁটা ফোঁটা পানির সাথে ভাবনাটা গলে যায়। বাবা আসার আগেই। কিছুক্ষণ অসহায় মনে করে নিজেকে। শিশুদের ঐ “মনে করা” ভাববার সুযোগ কই আমাদের? এমনি ঠিক হয়ে যাবে। আবার আসবে মায়ের কোলেই। আমরা না ভাবলেও শিশুরা ঐ “মনে করাটা” খুব অনুভব করে। এ অনুভূতিটা নিজেকে অসহায়, অধীন, করুণার পাত্র ভাবতে শেখায়। ধীরে ধীরে এ মানসিকতা নিয়েই শিশু বেড়ে ওঠে। যে অপার সম্ভাবনাসহ আল্লাহ আমার কাছে এ মানবটি আমানত দিয়েছিলেন; সে সম্ভাবনা, বড় হবার প্রবল আগ্রহ, আকাশ ফুঁড়ে বিশ্বটাকে দেখার, পতাল ফুঁড়ে নামার অদম্য শক্তিটা আমি নিজ হাতেই হত্যা করি।...

প্রত্যাশা

এক সন্ধ্যা সাক্ষাতেই যদি কেউ বলে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ স্বাপ্নিক এক তরুণ; বাড়াবাড়ি হতে পারে।স্বপ্নতরী সম্পাদক  আমার  এক বৈঠক-পরিচিত মানুষ। জানাল, দ্বিমাসিক সাহিত্য কাগজ করবে।‘পাথেয়’ নামে একটা বিভাগও থাকবে। পূর্ণ নাম ‘চলার  পথের পাথেয়’। আমাকেলিখতেবলল। তুরস্কে সর্ব প্রথম ছাপাখানা চালু হলে দেশের হস্তলিপিকাররা ইস্তাম্বুলের পথে পথে দোয়াত-কলমের কফিন মিছিল করেছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, এই বুঝি হাতের লেখার দিন শেষ। মানব অভ্যন্তরগ্রাসী এই জাল  আবিষ্কারের পর কোনসংবাদপত্র, সাহিত্য কাগজ, প্রকাশনী মিছিল করেছে বলে আমার জানা নেই। তবে  ছাপার পরিবর্তে ছায়ার প্রসারে আশঙ্কাজনক হারে পাঠক কমে জন্মেছে ‘লেখা-দর্শক’। আজকের তরুণরা লেখা পাঠের পরিবর্তে বরং দেখতেই অভ্যস্ত। স্রোতের উল্টো একজন তরুণের ছাপার সিদ্ধান্ত  গ্রহণকে একটি চ্যালেঞ্জ বলা উচিত। এক নওল সাহিত্যপ্রেমী অভিযোগ করেছিল, “সাহিত্যের জন্য কী করব? যাকেই প্রশ্ন করি, বলে ‘বই পড়’। বহু বই পড়েছি কিন্তু কই কিছু তো হল না!” আমি বললাম, আপনি সম্ভবত বই পড়েন না বরং বই দেখেন। মানে? বুঝলাম না। দেখুন, আমরা বলে থাকি, যাই আজকের পত্রিকাটা দেখে আসি। ...

সমালোচনা

বন্ধুবর জাকির মাহদিন তার ‘চায়ের কাপে সুখটান’ লেখাটির সমালোচনা চেয়েছেন। তারমত প্রতিষ্ঠিত লেখকের সমালোচনা করার বদ-অভ্যাস আমার নেই। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা বোধ হয় অভ্যাস-বদ-অভ্যাসের ঊর্ধ্বে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও লিখতে হল। সমালোচনা না চেয়ে বরং আলোচনা চাইলে কাজটা আমার জন্য সহজ ছিল।  ‘এতে না পেট ভরে, না স্বাদ লাগে’ বাক্যে যদিও ধুমপানের অসারতা তুলে ধরে এতে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু পরক্ষণে চকোলেট, কলা, কলার বাকল পদ্ধতি এবং এডভেঞ্চার, আবিষ্কার-অভিযান, দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে তরুণ নব্য ধুমপায়ী তৈরির কাজটা সাহিত্যের বিচারে মন্দ বলেই মনে হয়। ‘কখনো-সখনো’ ব্যাকরণের ভুলটা হয়তো বা লেখকের নয়। ‘দেখে আমার খুব ঘেন্না হত।’ শেষে নিজের নেশাটা প্রকাশের জন্য শুরুতে নেতিবাচকতা; কাঠামোটা সুন্দর। তবে ‘ঘেন্না’ শব্দটা ‘চা-খোর’ পাঠককে আঘাত করতে পারে। সামান্য আঘাত সচেতনভাবেও করা হয়ে থাকতে পারে। পরের বাক্যে ‘ছাগল কোথাকার’ পরপর দু’টি আঘাত পাঠক অশ্রদ্ধার শামিল।  সাহিত্যের জন্য মদ-গাঁজা বিকল্পে চা-কফি দাবিটা আপেক্ষিক। সামগ্রিক হিসেবে তুলে ধরাটা চিন্তার দৈন্যতায় পড়ে বুঝি? ১৮০ রোগ। দুধের ক্ষতি। ম...

এটা আগস্ট, ফেব্রুয়ারি নয়

“এই লড়ে কে? লড়ে কে?” বাচ্চাটা মাঝে মাঝে আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলে। অশুদ্ধ ধরনের কথ্য শব্দ ব্যবহার করে। অবাক হই। ওর মায়ের মুখে, আমাদের ঘরে এমন তো শুনেনি কখনো। মামা-খালাদের মুখেও না। ব্যাপারটা কী? কোথায় পায় ও এসব? বাচ্চার মা’র সাথে কথা বললাম। ও স্কুলে যাওয়া-আসা শুরুর পরই এসব শুরু করেছে। সম্ভবত ও যে বাচ্চাটার পাশে বসে, তার থেকে। স্যারের মাধ্যমে আসন পাল্টে দিলাম। কারণ বললাম না। মাসখানিক পর। আরো বাজে অবস্থা। বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করি, আম্মু এ শব্দটা কোথায় শুনেছ? অমুক ম্যাডাম ক্লাশে বলেছেন। কী করি? প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। ব্যাপারটা-প্রয়োজনটা তাকে খুলে বলব। যেন শিক্ষকদের সতর্ক করেন। প্রয়োজনে খণ্ডকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। প্রধান শিক্ষক নিজেই শরীরচর্চা করান। বাচ্চাকে সারিমতো দাঁড় করিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। অন্যদিন চলে আসি। আমি নিজেও শিক্ষক। মাদরাসায় যাওয়ার তাড়া থাকে। শরীরচর্চা শেষে কথা বলব। যথারীতি প্রধান শিক্ষক আসলেন। বাচ্চারা “নড়াচড়া” করছিল। “মহাশয় আসিয়া প্রথমেই চেঁচাইয়া উঠিলেন। কহিলেন, এই লড়ে কে? লড়ে কে?” ছোট বেলায় শুনা একটি ফার্সি কবিতার চরণ মনে পড়ল। “সার...