মোবারক হো... ২০১৬
বিদায় ২০১৫। মোবারক হো ২০১৬। চাঁদ-সুরুজের উদয়-অস্তের মধ্য দিয়ে কেটে গেল একটি বছর। উদয়-অস্ত থাকবে ঠিকই। ঈসায়ী ক্যালেন্ডারে ২০১৫ সাল থাকবে না। আর কোন দিন আসবেও না। তাইতো তাবৎ দুনিয়ার মানুষ অতীতের সব গ্লানি, যাতনা, হারানো, না পাওয়া: সব রকমের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুন বছরে সুন্দর সুখের সম্প্রীতির জীবন শুরু করতে চায়। আমিও চাই। আমরাও চাই। “দেশ দর্শন” তার সম্মানিত লেখক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী সকলের জন্য সে কামনাই করে। আমি আরো চাই- আমাদের এই ভাল থাকার-ভাল রাখার প্রার্থনা-প্রচেষ্টা যেন কোন দিন তারিখের সাথে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের প্রার্থনা-প্রচেষ্টায় সারা বছর জুড়ে দিনমানভরি যেন মঙ্গল কামনা থাকে বিশ্ব মানবতার তরে।
এক বছর পূর্বে ২০১৫’র প্রারম্ভেও আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিলাম। শুভ কামনা করেছিলাম। আমাদের এই দেশ, দেশের প্রতিটি নাগরিক তথা আমার মা মাটি মানুষের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করেছিলাম। কিন্তু তার কতটুকু পেয়েছি আমরা? হয়ত যতটুকু পেয়েছি- এই প্রার্থনা, এই কামনা না করলে এরচেয়ে খারাপ যেত আমাদের সময়। অথবা এমনই কাটত যেমন কেটেছে। তবে ঐ শাশ্বত বাণী ভুলে গেলে চলবে না- ‘মানুষের কৃত কর্মের কারণেই জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। যেন তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান। যাতে তারা ফিরে আসে’ [আলকুরআন-৪১/৩০]। আমরা সকলের জন্য কামনা করি, প্রার্থনা করি আগামীটা যেন সুন্দর, সুখের, সম্প্রীতির হয়। এবং আহ্বান জানাই- সে জন্য যা করণীয় তা যেন করতে পারি। যিনি সুন্দরের সুখের সম্প্রীতির নিয়ন্তা তাঁর দেয়া নিয়ম যেন মেনে চলতে পারি।
ঈসায়ী ক্যালেন্ডার বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রাচীন। ২০১৫ বছর আগে নবী হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের বছর থেকে এ সৌর বৎসরটির গণনা। এরও পূর্বেকার মিন ইত্যাদি পঞ্জিকার হিসাব আর নেই। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের (মক্কা হতে মদিনা গমন) বছর থেকে যে চন্দ্র বৎসরের গণনা তাই হিজরী বৎসর। আর আমাদের বঙ্গাব্দ হল এ অঞ্চলের রবি শস্য’র ফলনের সাথে মিল করে দীনে এলাহীর প্রবর্তক বাদশাহ আকবরের ক্যালেন্ডার। এটিও সৌর বৎসর। তবে এর প্রথম সন বিবেচনা করা হয়েছিল হিজরতের বছরকেই। মানুষকে এ গণনা শিক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ যিনি সূর্যকে উজ্জ্বল ও চন্দ্রকে আলোকময় করে এদের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন; যেন তোমরা দিন ও বছরের হিসাব জানতে পার’ [আলকুরআন-০৫/১০]।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন-পূর্বকালে ইরানী অগ্নিপূজক সংস্কৃতিতে ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দুটি উৎসব, দুটি দিবস পালনের প্রচলন ছিল। তন্মধ্যে নওরোজই হল নববর্ষ বা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। ইরান-পারস্য পরাশক্তি হেতু অন্যান্য দেশেও তাদের সংস্কৃতির চর্চা চালু ছিল। ইয়াসরিবও (মদিনার তৎকালীন নাম) মুক্ত ছিল না সাংস্কৃতিক এ ছোবল হতে। মুসলমানরা মক্কা থেকে হিজরতের পর খ্রিস্টানদের নওরোজ অনুষ্ঠান দেখে তাদেরও মনে চাইত কোন একটা দিবস পালনের। কিন্তু শুধু সনের প্রথম তারিখ হওয়াতে তো একটা দিনের আলাদা কোন গুরুত্ব, পৃথক কোন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে না। কেবল একটি তারিখের পেছনে মুসলমানের হায়াতের মূল্যবান অংশ ব্যয় হবে এ কেমন কথা?
আল্লাহ রব্বুল আলামিন দুটি বিশেষ আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট করে মুসলমানদের দুটি দিবস দান করলেন। দুটি ঈদের মাধ্যমে অগ্নিপূজক ইহুদী খ্রিস্টানদের অর্থহীন সংস্কৃতির চিরবিরোধিতা-ঈমানী বিরুদ্ধাচরণ শিক্ষা দেওয়া হল। যেন মুসলিমরা কেয়ামত অবধি সকল প্রকার অর্থহীন সংস্কৃতির চর্চা থেকে বিরত থেকে শুধু নিজের ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে যায়। সময়ের পালা বদলে ‘নওরোজ’ রূপান্তরিত হয়েছে ‘থার্টি ফাস্ট নাইটে’। আর অপসংস্কৃতির মূলোৎপাটনে ইসলামের শাশ্বত নির্দেশনা পরিপন্থী সেই থার্টি ফাস্ট নাইটের নামে বিভিন্ন অশ্লীল আচার-অনুষ্ঠানে গা ভাসিয়ে দিয়েছে মুসলমান।
স্মরণ রাখা উচিত, ইসলাম মুসলমানদের দুটি দিবস দিয়েছে। পাশাপাশি এ দুটি উৎসবের গুরুত্ব-আমেজ বাকি রাখার লক্ষ্যে, এর সার্বজনীনতার স্বার্থে আর কোন দিবসের অনুমতি এখানে নাই। মুসলমানদের জন্য আর কোন দিবস নাই। ইরানের কবি সম্রাট আল্লামা শেখ সাদীর একটি পংক্তি উদ্ধার করছি:-
প্রতি রাতই যদি হয় ‘শবে কদর’ রাত
শবে কদর মূল্যহীন হয়ে যাবে নির্ঘাত।
নতুন বছরে সারাদেশ জুড়ে আমরা যখন ‘শুভ শুভ’ করছিলাম। ঠিক তখনই সুবহে সাদিকের শেষ মুহূর্তে খোদায়ী আজাবে কেঁপে উঠলাম আমরা সবাই। রেখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬.৭। ফজরের নামাজে প্রকাশ পেল জুমার চিত্র। একটু পর সকালের আলো ফুটতে ফুটতে যখন শুনলাম, যেমন ধারণা করেছিলাম তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ভুলে গেলাম। আবার ‘যেই- সেই’ বনে গেলাম। জোহরের জামাতে সেই পুরনো চিত্র। এ ঘটনায় ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত ছিল। ইতিহাসে আছে, অতীতকালে আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করায় বিভিন্ন জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা ভূমিকম্প, ভূমিধস ও এ জাতীয় নানা শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন। ‘তাদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম। তাদের কারো প্রতি আমি প্রেরণ করেছি পাথরসহ প্রচণ্ড ঝটিকা। তাদের কাউকে আঘাত করেছিল বিকট আওয়াজ, কাউকে ভূমিতে বিধ্বস্ত করেছি, কাউকে করেছি নিমজ্জিত। (শাস্তি দিয়ে) আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করেননি। বরং (অবাধ্য হয়ে, পাপাচার করে) তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে’ [আলকুরআন-২৯/৪০]।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রকৃতির খেলা, প্রকৃতির আক্রোশ, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফল, ভূগর্ভে পানি কমে যাওয়ার কারণ ইত্যকার যা-ই বলি -আল্লাহ না করুন- আজাব এসে গেলে যে সব পাণ্ডিত্ব খতম হয়ে যায়, সেটা অন্যের কাছে স্বীকার না করলেও ৩০ সেকেন্ডের বাস্তবতায় তা আমি জেনে গিয়েছি। চোখ বন্ধ করে আমার মনকে জিজ্ঞেস করলেই সে সব স্বীকার করবে। প্রকৃত শান্তি সমৃদ্ধির জন্য প্রকৃত অর্থেই প্রকৃতির পথে ফিরে আসতে হবে। অতীতের চেয়ে ভবিষ্যৎ যেন ভালো হয় সে প্রার্থনা রইল, থাকবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন