প্রত্যাশা
এক সন্ধ্যা সাক্ষাতেই যদি কেউ বলে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ স্বাপ্নিক এক তরুণ; বাড়াবাড়ি হতে পারে।স্বপ্নতরী সম্পাদক আমার এক বৈঠক-পরিচিত মানুষ। জানাল, দ্বিমাসিক সাহিত্য কাগজ করবে।‘পাথেয়’ নামে একটা বিভাগও থাকবে। পূর্ণ নাম ‘চলার পথের পাথেয়’। আমাকেলিখতেবলল।
তুরস্কে সর্ব প্রথম ছাপাখানা চালু হলে দেশের হস্তলিপিকাররা ইস্তাম্বুলের পথে পথে দোয়াত-কলমের কফিন মিছিল করেছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, এই বুঝি হাতের লেখার দিন শেষ। মানব অভ্যন্তরগ্রাসী এই জাল আবিষ্কারের পর কোনসংবাদপত্র, সাহিত্য কাগজ, প্রকাশনী মিছিল করেছে বলে আমার জানা নেই। তবে ছাপার পরিবর্তে ছায়ার প্রসারে আশঙ্কাজনক হারে পাঠক কমে জন্মেছে ‘লেখা-দর্শক’। আজকের তরুণরা লেখা পাঠের পরিবর্তে বরং দেখতেই অভ্যস্ত। স্রোতের উল্টো একজন তরুণের ছাপার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে একটি চ্যালেঞ্জ বলা উচিত।
এক নওল সাহিত্যপ্রেমী অভিযোগ করেছিল, “সাহিত্যের জন্য কী করব? যাকেই প্রশ্ন করি, বলে ‘বই পড়’। বহু বই পড়েছি কিন্তু কই কিছু তো হল না!” আমি বললাম, আপনি সম্ভবত বই পড়েন না বরং বই দেখেন। মানে? বুঝলাম না। দেখুন, আমরা বলে থাকি, যাই আজকের পত্রিকাটা দেখে আসি। বিশ বছর ধরে নিয়মিত পত্রিকা দেখা একজন মানুষকে একটা নিউজ করতে বললে, পারবে বলে মনে করেন? কারণ খবরটা জানার জন্য পত্রিকা দেখা, রোমাঞ্চিত হওয়ার জন্য উপন্যাসে চোখ বুলিয়ে যাওয়া আর শিখার জন্য বইপড়া, সাহিত্যের জন্য পাঠকরা এক কথা নয়। সাহিত্যের জন্য কীভাবে পড়তে হয়; বুঝিয়ে দেওয়ার পর বলল, ভুলটা আমারই। সাহিত্যপ্রেমী কিশোরদের পাথেয় হিসেবে কী লিখব- ভাবতে ভাবতে ভূুমিকাটা দীর্ঘ হয়ে গেল।
এটা গতির যুগ। জীবনের সর্বক্ষেত্রে, প্রতিটি জীবনোপকরণে গতিময়তা বাড়ছেই। গতির এই ঊর্ধ্ব গতির একটি বড় ক্ষতি হল, দীর্ঘ সময় দিয়ে কোন কাজ করার মানসিকতা ধ্বংস হয়ে যাওয়া। ভাষার একটি উঁচু স্তরের নামই সাহিত্য।অল্প দিনে কারো সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয় না। পরিচয়ের পর দীর্ঘ পথ চলার কোন ফাঁকে যে বন্ধুত্ব হয়ে যায় সেটা জানাও থাকে না। তেমনি ভাষা-সাহিত্যের সাথে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ পথ চলাই একজন নবীনের মূল পাথেয়। ঊর্ধ্ব গতির স্রোতে নিজেকে হারানো তরুণের কাছ থেকে এ এক “মস্ত দুরাশা”।
কয়েকজন তরুণ একত্রে স্বপ্নের একটি তরী বানিয়েছে। প্রতিভার বৈঠা হাতে এ তরী বয়ে চলবে বিকাশ পানে। বিকশিত হবে, বিকশিত করবে। আলোকিত হবে, আলোকিত করবে। আলোয় আলোয় জাহানটা হয়ে উঠবে আলোকময়; এ-ই প্রত্যাশা।
(পুনশ্চ : কাগজটা আমার হলে শিরোনাম করতাম “বক্তব্যের চেয়ে ভূমিকা দীর্ঘ হওয়া সিদ্ধ নয়”।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন