মেরাজনগরের স্মরণিকার সম্পাদকীয় ১৪৩৭-৩৮
কায়েদা শ্লেট বুকে একটি শিশু মাদরাসায় আসে সাত থেকে দশ বছর বয়সে। দাওরায়ে হাদিস শেষ করে মাওলানা সাহেব হিসেবে বিদায় গ্রহণকালে সেই শিশুটি বিশ-বাইশ বছরের নওজোয়ান। যারা কুরআনুল কারিম হেফজ করে তাদের কেটে যায় আরো তিন-চার বছর। জীবনের দীর্ঘ একটি সময় বাবা-মা, ভাই-বোন থেকে দূরে কোন প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে সেখান থেকে বিদায় নেওয়া, পিতৃতুল্য গুরুজনদের থেকে পৃথক হওয়া -যারা নিজেরাও পরিবার পরিজন ছেড়ে এদের বুকে নিয়েই কাটিয়ে দেন জীবন- এ বিসর্জন, এ পৃথকতার প্রকৃত বাস্তবতা তুলে ধরার মতো শব্দ না থাকা ভাষার দৈন্যতা হতে পারে না। পরম দয়ালু পিতৃতুল্য আসাতিযায়ে কেরাম ও মাতৃক্রোড়ের ন্যায় সস্নেহে লালনকারী জামিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের এই বিরহকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মরণিকার প্রকাশ। সে সূত্রেই আমাদের ১৪৩৭-৩৮ হিজরি শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদের উদ্যোগে এ স্মরণিকা।
স্মরণিকা মূলত সাময়িকীর একটি প্রকার। সুতরাং সমসাময়িক যে কোন বিষয়ই হতে পারে স্মরণিকার বিষয়বস্তু। বলার প্রয়োজন নেই, ইসলামের প্রতিটি বিধানই চির সমসাময়িক। সে বিবেচনায় কুরআন-হাদিসের আলোকে লিখিত যে কোন বিষয়ই স্মরণিকায় স্থান পাওয়ার যৌক্তিকতা রাখে। তথাস্তু দারুল উলূম মেরাজনগরের নীতিগত সিদ্ধান্ত : স্মরণিকা শুধু সাময়িক না হয়ে যেন পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ তথা একটি বিধানের পূর্ণ সমাধানসমৃদ্ধ হয়। এ নীতির আলোকে- মানবজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক, যা মানবজীবন জীবন লাভেরও উসিলা “বিবাহ”কে প্রতিপাদ্য করে স্মরণিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
বিবাহের সংজ্ঞায় যদি বলি, একজন পুরুষের জীবনে চাঁদের মৃদু কিরণ, সূর্যের উত্তাপ, আকাশের উদারতা, দিগন্ত রেখার বক্রতা, ধ্রুব তারার লালিত্য, লাল গ্রহের রুক্ষতা, নক্ষত্রকুলের প্রভা, ব্ল্যাক হোলের গাঢ় আঁধার, ফুলের বর্ণ ও গন্ধ, বৃক্ষ শাখের আড়মোড়া, পত্রপল্লবের সজীবতা, তরবারির তীক্ষ্ণ ধার, লজ্জাবতী গাছের লাজনম্রতা, প্রভাতের মৃদু-মন্দ মলয়ের চপলতা, অবাধ্যসব সৃষ্টির অভিমান, ফুলকলির মুচকি হাসি, জটা মানসীর কুটচাল, ঝিনুকের সম্ভ্রম, মুক্তার গোপনীয়তা, চুম্বকের আকর্ষণ, রংধনুর সপ্তবর্ণা রূপ, ঝরাপাতার ক্রন্দন, শুভ্র তুষারের শীতলতা, হিমেল হাওয়ার প্রশান্তি, ছবির নৈঃশব্দ, প্রস্তরের কঠোরতা, নাগিনীর বিষ, শৃগালের ধূর্ততা, বুলবুলির কণ্ঠের সমষ্টি এক আজব সৃষ্টি পুরুষের জীবনে আসা। বিবাহের এই সংজ্ঞা মেনে নিলে শ্রদ্ধেয় গুণী পাঠক অবলীলায় স্বীকার করবেন- বিবাহ পরবর্তী জীবনের নির্দেশনা প্রদানের মতো কঠিন কাজ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
আমাদের সামান্য সাধ্য দিয়ে কুরআন-হাদিস-ইসলামী ইতিহাসের আলোকে বিবাহ ও বিবাহ পরবর্তী জীবনের দিক নির্দেশনাসমৃদ্ধ সর্ব মহল গ্রহণযোগ্য একটি স্মরণিকা পাঠকের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিচারের ভার ঋদ্ধ পাঠকের স্কন্ধে।
আমি মনে করি, জমিদাতা থেকে শুরু করে বিগত দুই যুগের অধিককাল ধরে যত আল্লাহর বান্দা যে কোনভাবে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত- স্মরণিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে সকলের কাছেই আমরা ঋণী। সুতরাং সম্মানিত মুতাওয়াল্লী সাহেব, পরম শ্রদ্ধেয় মুহতামিম সাহেব এভাবে উল্লেখ করে করে কারো অবদানকে খাটো করার ধৃষ্টতা আমরা দেখাব না। সকলের সব ভালো কাজের বিনিময় যেন তিনিই দান করেন, ভালো কাজের তাওফিক যিনি দান করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন