মুহতারাম মুফতি সাহেব!

কটি ইফতা বিভাগের পুনর্মিলনী উপলক্ষে পাঠের জন্য রচিত)
মুহতারাম মুফতি সাহেব!
দীর্ঘ দিন বিদেশ-বিভুই কাটানো ছেলেকে বুকে ফিরে পাওয়া বাবার বুকটা যেমন আনন্দে ভরে উঠে, নিজেকে ভুলে গিয়ে হয়ে যায় আত্মহারা; তেমনি আবনায়ে দারুল ইসলামকে বুকে পেয়ে জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম আজ আনন্দিত, আন্দোলিত, উদ্বেলিত। সময়ের সীমাবদ্ধতা না থাকলে আবনায়ে কদিমকে কাছে পাওয়ায় হর্ষ স্রোতের ব্যাখ্যার বৃথা চেষ্টা করতাম আরো কিছু সময়। হিজরি পনের শতাব্দীর উম্মতের অতন্দ্র প্রহরী আপনারাই। যখন ভাবি, বিগত পাঁচ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই আবনায়ে দারুল ইসলাম উম্মতের দীনি চাহিদা পূরণে নিজেদের সর্বোচ্চ কুরবানি পেশ করে যাচ্ছে; আনন্দে মনটা ভরে উঠে, শুকরিয়ায় দরবারে ইলাহিতে মাথাটা নিচু হয়ে আসে।
ওহে আফলাজু কাবিদিনা!
কর্মক্ষেত্রে সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞ আসাতিজায়ে কেরামের কাছ থেকে নতুন নতুন দিকনির্দেশনা গ্রহণ করবেন। উম্মতের প্রয়োজনে নব উদ্যমে, আরো অধিক আত্মত্যাগ-কুরবানির দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করবেন- তবেই স্বার্থক হবে এই পুনর্মিলনী জলসা। বিজ্ঞ-বিচক্ষণ-দক্ষ আসাতিজায়ে কেরামের বক্তব্য মিছিলের শেষ প্রান্ত থেকে আমি অজ্ঞ-মূর্খ-অদক্ষ আপনাদের দরবারে সামান্য একটি আবেদন পেশ করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে ক্ষমা পাওয়ার আশা রাখি।
আওলাদে মুসলিমিনের জিম্মাদার বন্ধুগণ!
কওমী মাদরাসার প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি হল, এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানত আবাসিক। এর পেছনে যে সব উদ্দেশ্য লুকায়িত তন্মধ্যে উসতাজ এবং ছাত্র উভয়পক্ষ তাদের হক-অধিকার পূর্ণ আদায়ের সুযোগ লাভ করা অন্যতম। একজন তালিবুল ইলমের নিকট উসতাজ তিনটি বিষয় প্রাপ্য। ১. সার্বক্ষণিক উপস্থিতি। ২. পূর্ণ আনুগত্য-খেদমত। ৩. সাধ্যানুযায়ী সবক শিখা। বিপরীতে তালিবুল ইলমও তার উসতাজের নিকট তিনটি অধিকার রাখে। ১. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা ও দেওবন্দী মেজাজের ওপর পাহাড়সম অটলতা দীক্ষা দেওয়া। ২. মা‘রেফাতে ইলাহী ও মুহাব্বতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্জনের পথে নিরবচ্ছিন্ন চলতে অভ্যস্ত করা। ৩. কুরআন-হাদিসের সহিহ তরজমা ও ফেকাহ শিক্ষা দেওয়া।
জাতির কর্ণধার ওলামায়ে কেরাম!
আপনারা সকলেই অবগত, আজ আমরা উভয়পক্ষই শুধু তৃতীয় দায়িত্বটিকে নিজেদের দায়িত্ব জ্ঞান করি। আর প্রথম দুইটি থেকে ক্রোশ ক্রোশ দূরে অবস্থান করি, ইল্লা মা শা’ আল্লাহ। আমার নয় বছরের শিক্ষকতা জীবনের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হল, কওমী অঙ্গনে বিরাজমান নৈরাশ্য, হতাশা, হীনম্মন্যতার মূল কারণ এটাই। উপর্যুক্ত অধিকারের বিষয়টি দীর্ঘ ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। পর্যাপ্ত ব্যাখ্যার অভাবে, হজরতে ওলামায়ে কেরামের কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও অবাক হব না।
জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলামের কৃতী সন্তানেরা!
দুনিয়ার জীবনে আরাম-আয়েশ করার জন্য আমাদের নির্বাচিত করা হয় নাই। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আম্মাজান আয়েশা রাদি. বলেছেন, “পর পর দুই দিন যবের রুটি দ্বারা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৃপ্ত হন নাই; এ অবস্থাতেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়।” আরো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, হাবিবে খোদার সামনে মক্কার পাহাড় স্বর্ণে পরিণত করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, “আমি এমন জীবন চাই, একদিন খাব শোকর করব। অন্য দিন থাকবে না সবর করব।” দীনের জন্য, দীনের খেদমতের জন্য আমাদের সকলের জীবন উৎসর্গিত হোক। এ পথে যত বাধাবিপত্তি, চড়াই-উতরাই, ক্ষুৎপিপাসা সব মাড়িয়ে সকলে মিলিত হব হাউজে কাউসারে। দেখা হবে জান্নাতে। আল্লাহুম্মা আমিন।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

“সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা”

দুরুদে সালাত শব্দ থাকা আবশ্যক সালামে থাকবে س ل م

দুটি রহস্যান্মোচন